নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে রাজশাহীতে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের ভেড়িপাড়া এলাকায় প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সামনে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। তাতে রাজশাহী মহানগরসহ জেলার ৯টি উপজেলার কয়েক শ সহকারী শিক্ষক অংশ নেন।
সমাবেশে শিক্ষকেরা বলেন, শিক্ষকেরা হলেন জাতি গড়ার কারিগর। তাঁরা কেন এখনো ১৩তম গ্রেডে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হয়ে পড়ে রইবেন? এই গ্লানি তাঁরা আর বইতে পারছেন না। দশম গ্রেডে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার মর্যাদা পাওয়া তাঁদের অধিকার। তাঁদের এ যোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু বিগত সব সরকারের আমলে প্রাথমিকের শিক্ষকেরা লাঞ্ছনা, বঞ্চনা আর অবহেলার শিকার হয়েছেন।
সমাবেশে রাজশাহী পিটিআইয়ের শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে, আমরা কঠোর শ্রম দিই। আমাদের মেধা আছে, সততা আছে। শুধু নেই অর্থনৈতিক মুক্তি। আমাদের এখনো নুন আনতে পান্তা ফুরায়। অথচ আমরাই নাকি জাতি গড়ার কারিগর। আমরা দশম গ্রেড দাবি করলে অর্থনীতিবিদেরা বলেন, এত শিক্ষককে এত বেশি টাকা দেওয়া যাবে না। দেশ থেকে যখন কোটি কোটি টাকার পাচার হয়ে যায়, তখন এই অর্থনীতিবিদেরা কোথায় থাকেন? আমাদের কষ্ট হয়, আত্মমর্যাদার জন্য এভাবে রাস্তায় নামতে হয়।’
মোহনপুর থেকে আসা সহকারী শিক্ষক গোলাম মাওলা বলেন, ‘আমরা শিক্ষক। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ছোট বাচ্চাদের পড়াই। দিন শেষে ভাবি, আমরা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। আমরা কেন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হয়ে থাকব? আমরা তো দ্বিতীয় শ্রেণি ডিজার্ভ করি।’
পুঠিয়া থেকে আসা সহকারী শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষাই যদি জাতির মেরুদণ্ড হবে, তবে শিক্ষকেরা কেন এখনো “থার্ড ক্লাস?” এই থার্ড ক্লাসের গ্লানি আমরা বয়ে বেড়াতে পারছি না।’
সমাবেশে শিক্ষকেরা ‘এক দফা এক দাবি, দশম গ্রেড দশম গ্রেড’, ‘নোবেল বিজয়ীর দেশে, শিক্ষক কেন রাস্তায় বসে’, ‘যারা জাতি গড়ার কারিগর, দশম গ্রেড তাদের অধিকার’, ‘শিক্ষকের সঙ্গে বৈষম্য, চলবে না চলবে না’, ‘মাথায় ঋণের বোঝা নিয়ে, পড়ানো কি এত সোজা’সহ নানা স্লোগান দেন।
গোদাগাড়ীর ডোমকুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাঘা থেকে আসা সহকারী শিক্ষক ফজলুর রহমান, পবার সহকারী শিক্ষক শাহানা মান্নান প্রমুখ। সমাবেশে শিক্ষকেরা সমস্বরে ‘যদি লক্ষ্য থাকে অটুট’ গানটি গান। এরপর তাঁরা একটি মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে যান। সেখানে শিক্ষকদের প্রতিনিধিদল এক দফা দাবি আদায়ে একটি স্মারকলিপি দেন।