হোম > সারা দেশ > রাজশাহী

টাকা দিলেই মেলে মদ, লাগে না কোনো লাইসেন্স

রিমন রহমান, রাজশাহী

টাকা দিলেই পর্যটন করপোরেশনের রাজশাহীর বারে মেলে মদ। চাইলে পার্সেলে বাইরেও মদ নিয়ে যাওয়া যায়। অথচ বৈধ বার থেকেও মদ বাইরে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যাঁরা মদপানে অভ্যস্ত, তাঁদের ভেতরে বসেই পান করতে হবে। আর এ জন্য থাকতে হবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পারমিট লাইসেন্স। লাইসেন্স ছাড়া বারে বসেও মদপানের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু একেবারে উল্টো চিত্র এই বারে।

রাজশাহী পর্যটন মোটেল সংলগ্ন এই বারটি পাঁচ বছর পর পর ইজারা দেওয়া হয়। পরিচালিত হয় ব্যক্তিমালিকানায়। ফলে ইজারা গ্রহণকারী সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছেমতো বার চালান। এই বার চলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্সে। কিন্তু নিয়ম না মানার কারণে অধিদপ্তরকেও এই বারের বিরুদ্ধে কখনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। ইজারার শর্ত রোজ লঙ্ঘন হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয় না পর্যটন করপোরেশন।

এদিকে থার্টিফার্স্ট নাইটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ। এতে বলা হয়, গতকাল শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) থেকে আগামীকাল ১ জানুয়ারি (রোববার) পর্যন্ত বৈধও বারও বন্ধ রাখতে হবে। তা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কিন্তু গতকাল শুক্রবার রাত ৮টার দিকে দেখা গেল রাজশাহী পর্যটন বার খোলা। বারে তরুণদের হুমড়ি খাওয়া ভিড়। সাধারণত নিরিবিলি থাকা ওই এলাকায় রিকশা, অটোরিকশা আর মোটরসাইকেলের চাপে রীতিমতো যানজট লেগে ছিল। ভেতরে ঢুকতেই সিকিউরিটি ইনচার্জ বললেন, ‘পার্সেল নিলে ওপরে ওঠার দরকার নেই। পার্সেল দেওয়া হচ্ছে নিচতলা থেকেই।’

নিচ তলার গ্যারেজে ডিপ ফ্রিজ থেকে নানা নামের মদের বোতল বের করে বিক্রি করছিলেন নিরাপত্তা প্রহরী মো. আরিফ। তাঁর সামনে টেবিলে রাখা একটি বাক্স রাখা। যারা মদ কিনছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছিল বকশিশ। বকশিশের সেই টাকা ভরে রাখা হচ্ছিল ওই বাক্সে। পাশেই দরদাম করছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর কয়েক জন। পাঁচ হাজার টাকার মদ তাঁরা তিন হাজার দিতে চাচ্ছিলেন। শেষমেশ তিন হাজার টাকায় রফা হলো। মদ নিয়ে তারা চলে গেলেন। এদের মতো অসংখ্য মানুষ মদ কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এদের বেশির ভাগই বয়সে তরুণ। মদ দেওয়ার সময় পারমিট লাইসেন্স ভুলেও দেখতে চাচ্ছিলেন না বিক্রেতা আরিফ। দোতলা ও তৃতীয়তলায় উঠে দেখা গেল, আলো-আঁধারের মাঝে বসে চলছে মদ্যপান। একটি টেবিলও ফাঁকা দেখা গেল না। সেবনের লাইসেন্স না দেখেই তাদের মদ দেওয়া হচ্ছিল।

নিচতলায় পার্সেলের মদ বিক্রির সময় প্রত্যেকের কাছ থেকেই নেওয়া হচ্ছিল বকশিশ। কেউ ১০০ টাকা বকশিশ দিলে আরিফসহ অন্য নিরাপত্তা প্রহরীরা বলছিলেন, আজকের দিনে ১০০ টাকা বকশিশ চলে না। ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বকশিশ নিয়ে তারা বাক্সে ঢোকাচ্ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীতে মদপানের লাইসেন্স আছে প্রায় ৩৬০ জনের। এদের অনেকেই মারা গেছেন। এখন বৈধ লাইন্সেধারীর সংখ্যা মাত্র ১৫০ জন। কিন্তু রোজ রাতে রাজশাহী বারে মদ পান করেন অন্তত ৫০০ জন। এদের কারও লাইসেন্স থাকে না। বারে লাইসেন্স দেখাও হয় না। এ জন্য তাঁদের কাছ থেকে যে বকশিশ আদায় হয় তা ভাগ করে নেন বারের ব্যবস্থাপক আবদুর রাজ্জাকসহ কর্মচারীরা।

বিষয়টি স্বীকারও করেছেন রাজ্জাক বলেন, ‘বকশিশের বাক্সে এখানকার কর্মচারীরা কিছু বকশিশ নেয়। কাজ শেষে তারাই ভাগ করে নেয়।’ পারমিট লাইসেন্স না থেকেই সবাইকেই মদ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব সময় আসলে লাইসেন্স দেখা হয় না।’ নিয়ম না থাকলেও পার্সেলে মদ বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে বাসায় নিয়ে গিয়ে খেতে চায়। সে কারণে দিতে হয়।’ আরএমপির নিষেধাজ্ঞার পরও বার খোলা রাখার বিষয়ে বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থার্টি ফাস্ট নাইটে বন্ধ রাখতে বলেছে। পুলিশের নির্দেশনা জানি না।’

নিয়ম-নীতি না মেনেই বার পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সপ্তাহখানেক আগে আমি হঠাৎ বার দেখতে গিয়েছিলাম। এই ধরনের অনিয়মগুলো আমিও দেখেছি। ওদের সতর্ক করে এসেছি। এরপরও নিয়ম-নীতি না মানলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পারমিট লাইসেন্স ছাড়াই যদি বারে গিয়ে সবাই মদ পায়, কিংবা পার্সেল নিয়ে যায় তাহলে বৈধ আর অবৈধ ব্যবসার মধ্যে তো কোনো পার্থক্য থাকল না।’ 

নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও বার খোলা রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে আরএমপির মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা দেখছি। এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ পরে রাজপাড়া থানা-পুলিশের একটি দল গিয়ে বার বন্ধ করে দেয়। কিন্তু আজ শনিবার সকাল থেকে আবারও বার খোলা হয় পার্সেল বিক্রি করার জন্য। বাইরে বার বন্ধের নোটিশ টানিয়েও বিক্রি করা হচ্ছিল মদ। আজ দুপুরের দিকে রাজপাড়া থানা-পুলিশের একটি দল আবার গিয়ে মদ বিক্রি বন্ধ করে।’

এ নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) আ. ন. ম. মোস্তাদুদ দস্তগীর বলেন, ‘বার থেকে মদ বাইরে নেওয়ার সুযোগ নেই। খেতে হলেও লাইসেন্স থাকা লাগবে। রাজশাহীতে এর ব্যতিক্রম হচ্ছে, এ বিষয়টি জানা নেই। আমি রাজশাহী পর্যটন মোটেলের ব্যবস্থাপককে এখনই জানাচ্ছি।’ পরে তিনি ফোন করে জানান, বারের ইজারাদার লন্ডনে। তাই তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে বার ব্যবস্থাপককে সতর্ক করেছেন।

কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটিতে আওয়ামী লীগের কর্মী

বগুড়ায় ৬ জনকে কুপিয়ে জখম, অভিযোগ যুবদল নেতার বিরুদ্ধে

থমথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত, বিজিবি–বিএসএফের পতাকা বৈঠক

পাবিপ্রবির নতুন ট্রেজারার শামীম আহসান

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে ভারত ও বাংলাদেশের গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ

রুয়েটের নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

বাঘায় বিএনপি নেতার বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ

চাঁদাবাজি-দখলদারি বন্ধ না হলে যুদ্ধ চলবে: ডা. শফিকুর রহমান

বগুড়ায় পুলিশ হেফাজত থেকে পালিয়ে যাওয়া আসামি নওগাঁয় গ্রেপ্তার

জামায়াতের সম্মেলন উদ্বোধন করতে গিয়ে অঝোরে কাঁদলেন শহীদ সাকিবের বাবা

সেকশন