Ajker Patrika
হোম > সারা দেশ > রাজশাহী

পত্রিকার হকার থেকে আইটি প্রশিক্ষক আলমগীর

জিল্লুর রহমান

পত্রিকার হকার থেকে আইটি প্রশিক্ষক আলমগীর

মান্দা (নওগাঁ) : শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা; প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে ছুটতে হয়েছে বাসস্ট্যান্ডে। এর পর পত্রিকা সংগ্রহ করে পাঠকের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেওয়াই ছিল তাঁর নিত্যদিনের কাজ। এ পেশার আয় দিয়েই চলত পাঁচজনের সংসার। সংসারের বড় ছেলে হওয়ায় কিশোর বয়সেই নামতে হয়েছিল জীবনযুদ্ধে। তবুও হাল ছাড়েননি। সততা, আত্মবিশ্বাস, আর কঠোর পরিশ্রম এনে দিয়েছে সফলতা। এক সময়ের পত্রিকা বিক্রেতা সেই কিশোর আলমগীর কবির এখন সফল আইটি উদ্যোক্তা।

আলমগীর কবিরের বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলায়। উপজেলার চৌবাড়িয়া বাজারের কাছে মালশিরা গ্রামের ফয়েজ উদ্দিনের ছেলে তিনি। তিন ভাইবোনের মধ্যে আলমগীর সবার বড়। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবা ফয়েজ উদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়লে সংসারে নেমে আসে চরম দুর্দিন। আলমগীর তখন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। অভাবের কারণে সেখানেই লেখাপড়ার ইতি টানতে হয়েছে। কিশোর বয়সেই হাল ধরতে হয়েছে সংসারের। টাকা-পয়সা না থাকায় কী করবেন ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েন। এরই মধ্যে পরিচয় ঘটে জাহাঙ্গীর আলম নামে এক পত্রিকা বিক্রেতার সঙ্গে। তাঁর হাত ধরেই পত্রিকার হকার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন আলমগীর। আজ তিনি নিজ এলাকার বহু তরুণের ভরসাস্থল। পত্রিকার হকার থেকে শুধু অধ্যবসায়ের গুণে আইটি প্রশিক্ষকের মতো ভূমিকায় নিজেকে গড়ে নিতে পেরেছেন তিনি।

আলমগীরের পথটা সহজ ছিল না। কোনো উদ্যোক্তারই থাকে না। পত্রিকা বিক্রির আয়ের টাকায় অসুস্থ বাবার চিকিৎসা, ছোট ভাইবোনের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ চালানো দুরূহ হয়ে পড়ে। মাঝেমধ্যে অন্যের দোকানে খণ্ডকালীন কাজ করে বাড়তি আয়ের চেষ্টা করেন। তবুও হাল ছাড়েননি। সততা, নিষ্ঠা, আর কঠোর পরিশ্রমে আজ তিনি সাফল্যের দেখা পেয়েছেন। আর এ ক্ষেত্রে তাঁর সহায় হয়েছে পত্রিকাই। পড়ার অভ্যাস যে ছাড়তে পারেননি তিনি। অবসর সময়ে সব ধরনের পত্রিকা অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তেন। এক সময় কম্পিউটার নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন লেখা তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি–সংক্রান্ত পাতাগুলো পড়া শুরু করেন। গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলো সংগ্রহেও রাখতেন।

আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপে আলমগীর কবির জানালেন, একটু একটু করে জানতে গিয়ে কম্পিউটার বিষয়ে আগ্রহ বাড়তেই থাকে। একপর্যায়ে এ নেশা তাঁকে পাগল করে তোলে। অবশেষে এক ভাইয়ের শরণ নেন, চৌবাড়িয়া বাজারে যার কম্পিউটারের দোকান রয়েছে। পত্রিকা বিলি শেষে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই বড় ভাইয়ের দোকানে বসেই নিয়মিত কম্পিউটার শেখা শুরু করেন। তীব্র আগ্রহের কারণে শিখতে সময় লাগে না। দ্রুত উন্নতি হয় তাঁর। দক্ষতা বাড়াতে পত্রিকার আইটি পাতাগুলো তাঁর কাজে লাগে। কিন্তু নিজের কম্পিউটার না থাকায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কাজ করতে পারছিলেন না। আর কম্পিউটার কেনার টাকা তো নেই তাঁর কাছে।

আলমগীর কবির বলেন, পত্রিকা বিলির সূত্র ধরে এক সময় গ্রামীণ ব্যাংক চৌবাড়িয়া শাখার ব্যবস্থাপকের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। কম্পিউটার কেনা ও শেখার আগ্রহের কথা শুনে তিনি আলমগীরকে ২০ হাজার টাকা ঋণ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। যথাসময়ে ঋণ পেয়েও যান। এর সঙ্গে মায়ের এক জোড়া হাতের বালা বিক্রির টাকায় ২০০৪ সালের দিকে কিনে ফেলেন পুরোনো একটি কম্পিউটার, প্রিন্টার ও ক্যামেরা। চৌবাড়িয়া বাজারেই শুরু করেন ব্যবসা। পরে এর সঙ্গে যুক্ত করেন ফটোস্ট্যাস্ট মেশিনও। এর পর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

ব্যবসার আয় দিয়ে ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম বাঁধনকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করান আলমগীর। বর্তমানে তিনি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরি করছেন। ক্রমেই ব্যবসার প্রসার ঘটায় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। সরকারের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের খোঁজ পেয়ে ২০১০ সালে ‘মা কম্পিউটার’ নামে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলেন। পর্যায়ক্রমে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যুক্ত করা হয় ২০টি কম্পিউটার। ২০১২ সালে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড থেকে কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন ও ডেটাবেজ প্রোসেসিংয়ের অনুমোদন পান।

এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি যুবককে প্রশিক্ষণ ও সনদপত্র দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ২০০ জন যুবক বিভিন্ন সরকারি দপ্তরসহ বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করছেন। বহু তরুণের কর্মসংস্থানের সহায় হতে পেরে এক ধরনের আনন্দবোধ করেন আলমগীর। বললেন, ‘বর্তমান আমার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এলাকার ৪০ জন শিক্ষিত বেকার ছেলে-মেয়ে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছে। মার্কিন একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সিপিএ, ই–মেইল, মার্কেটিং, গ্রাফিকস ডিজাইনসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করছেন তাঁরা। এ থেকে যা আয় হয়, তার ৬০ শতাংশই কর্মকর্তাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া দোকান থেকে কম্পিউটার কম্পোজ, ফটোকপি, ছবির কাজ, বিকাশ লেনদেন, ফ্লেক্সিলোডসহ ইন্টারনেটের যাবতীয় সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতি মাসে এখন অন্তত ১ লাখ টাকা আয় হয়।’

বগুড়ায় ডেকে নিয়ে যুবককে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ

রাবির তথ্য কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পেলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘পৃষ্ঠপোষক’

বগুড়ায় ইফতারের পর ডেকে নিয়ে যুবককে হত্যা

বগুড়ায় নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে তুফানের সাক্ষাৎ

শাজাহানপুরে আন্ডারপাসের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ

পাবনায় স্কুলের শ্রেণিকক্ষ থেকে নৈশপ্রহরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

নওগাঁ ও পাবনায় বাস ডাকাতি: আন্তজেলা ডাকাত দলের ছয় সদস্য গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্টে শেরপুরে আ. লীগের ২ নেতা গ্রেপ্তার

মা–মেয়েসহ নিহত ৩, আহত তিনজনের চেতনার মাত্রা কমছে

রাজশাহীতে নদী থেকে ভ্যানচালকের লাশ উদ্ধার