রপ্তানিমুখী শিল্প–কারখানার জন্য চলমান কঠোরতম বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। আগামীকাল ১ আগস্ট থেকে চালু হবে এসব কারখানা। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির খবর প্রথমে সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার কামারপাড়া গ্রামের আল মামুন। তিনি গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় এজিএম পদে কর্মরত। কারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণা গণমাধ্যমে আসার পরপরই তাঁর কর্মস্থল থেকে যথাসময়ে যোগ দিতে বলা হয়। ১৪ দিনের ছুটি পেয়ে স্ত্রী ও শিশু সন্তান নিয়ে শ্বশুরবাড়ি এনায়েতপুর থানার গোপালপুরে ছিলেন তিনি। গণপরিবহন বন্ধ। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কারণ তাঁকে একদিন আগেই পৌঁছাতে হবে। বহু কষ্টে ৭ হাজার টাকায় বেলকুচি থেকে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে শুক্রবার রাত ৯টায় রওনা হন। টঙ্গীতে পৌঁছান রাত ১২টায়।
তড়িঘড়ি করে বের হওয়ার কারণে ভুলে রেখে এসেছেন কিছু মূল্যবান জিনিসপত্র। এরপরও গন্তব্যে পৌঁছতে পেরে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন যেন গার্মেন্ট কর্মী আল মামুন। তিনি বলেন, আমাদের বেলকুচি, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুর উপজেলায় অন্তত অর্ধলক্ষ মানুষ গার্মেন্টে বিভিন্ন পদে চাকরি করে। ঈদ উপলক্ষে অধিকাংশ মানুষ এসেছিলেন স্বজনদের সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করতে। হঠাৎ করে এ রকম ঘোষণা আসবে কল্পনা করিনি। জানা মাত্রই যেকোনো ভাবে আমাকে ছুটে আসতে হয়েছে কর্মস্থলে।
আজ শনিবার সকাল থেকে কর্মস্থল রাজধানী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জে যাওয়ার জন্য ছুটছে উত্তরাঞ্চলের অসংখ্য মানুষ। দুপুরে সরেজমিনে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মোড়, কড্ডার মোড় ও সয়দাবাদ এলাকায় দেখা যায় শ্রমজীবী মানুষের ভিড়। যে যার মতো ছুটছেন কর্মস্থলের উদ্দেশে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় হাজার–হাজার মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। মহাসড়কে কর্মজীবী এসব অসহায় মানুষের দুচোখ শুধু ট্রাক–পিকাপ ভ্যানের দিকে। খালি ট্রাক পেলে জনপ্রতি দুতিন শ টাকায় পরিবারের সবাই গাদাগাদি করে চেপে বসছেন। এ জন্য সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক গত কয়েক দিনের চেয়ে বেশ চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
কামারখন্দের জামতৈল এলাকার বাসিন্দা গার্মেন্ট কর্মী আসাদুল ইসলাম, সয়দাবাদ এলাকার মোরসালিন, সদর উপজেলার মিরপুর মহল্লার সাব্বির হোসেন জানান, আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউন রয়েছে। সে অপেক্ষাতেই নিশ্চিন্তে বাড়িতে ছিলেন তাঁরা। হঠাৎ করে কারখানা চালুর সংবাদ পেয়ে অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েন। পেটের টানে কাজে যোগ দিতে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। ট্রাকে চড়ে যাচ্ছেন ঢাকায়। যেকোনো মূল্যে কর্মস্থলে গিয়ে কাজে যোগ দিতে হবেই। তা না হলে চাকরি থাকবে না।