শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজশাহীতে শুরু হয় বিজয় মিছিল। এ সময় উৎসুক জনতা আগুন ধরিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন স্থাপনায়। ভাঙচুর করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। আজ সোমবার দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলায় এসব ঘটনা ঘটে।
বিকেলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সদর দপ্তরে আগুন দেওয়া হয়। সেখানে পুলিশের কয়েকটি গাড়ি পুড়ে যায়। আগুন দেওয়া হয় আরএমপির মালোপাড়া ও কাটাখালী ফাঁড়িতে। নগর ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। নগর ভবনের কক্ষগুলো থেকে ফ্যান ও এসি খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সন্ধ্যায় দ্বিতীয় দফায় নগর ভবনে আগুন দেওয়া হয়। তখন নগর ভবনে অবশিষ্ট থাকা চেয়ার-টেবিলও লুট করে নিয়ে যেতে দেখা যায়। পাঁচতলা পর্যন্ত আগুন ওঠার পর দমকল বাহিনী গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে।
নগর ভবনের নিচতলায় অগ্রণী ব্যাংকের একটি শাখাতেও আগুন লাগে। ব্যাংকেও ব্যাপক লুটপাট চলে। নগর ভবনের পশ্চিম পাশে মিডল্যান্ড ব্যাংকের এটিএম বুথ লুট করা হয়। নগরীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার ও রিসোর্টে ভাঙচুর করা হয়েছে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে হামলা চালাতে গেলে সেনাসদস্যরা তা প্রতিহত করেন।
উপশহরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। নগরীর রানীবাজারে লিটনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। ভবনটিতে থাকা কয়েকটি পোশাকের শোরুমও ভাঙচুর করা হয়েছে। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের বহুতল ভবন সরকার টাওয়ারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
নগরীর রেলগেট এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। নিউমার্কেট এলাকায় নবম সংসদ নির্বাচন থেকে টানা চারবার সংসদ সদস্য হওয়া ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন বহুতল ভবন থিম ওমর প্লাজায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পুঠিয়ার বিড়ালদহে প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার বাড়ি ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আক্রান্ত হয়েছে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের বাসভবন। নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মহানগর কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে।
এর আগে দুপুরে নগরীর আলুপট্টি এলাকায় পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। তখন ব্যাপক ককটেল বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে সাকিব আনজুম (২৭) নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হন। তাঁর গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। এ আন্দোলনে রাজশাহীতে এটিই প্রথম মৃত্যু। সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ জনই গুলিবিদ্ধ। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিকেলে নগরীর সাগরপাড়ায় ইত্তেফাকের রাজশাহীর জ্যেষ্ঠ আলোকচিত্রী আজাহার উদ্দিনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। রাজশাহীতে আক্রান্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের মালিকানাধীন দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকা। নগরীর উপশহরে পত্রিকাটির কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
নগরীর দড়িখড়বোনায় সিল্কসিটি নিউজ ডটকম নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নগর আওয়ামী লীগের নেতা আজিজুল আলম বেন্টুর মালিকানাধীন নিউজ পোর্টাল পদ্মা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে।
এসব ঘটনা নিয়ে রাজশাহীর পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জেলা ও মহানগরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ফোন করা হলেও তাঁরা ধরেননি।