দশ কেজি সরিষা থেকে বের হয় তিন কেজি তেল। আর এই তেল বের করতেই বৃদ্ধ দম্পতিকে ঘানি টানতে হয় একটানা আট ঘণ্টা। এই অমানবিক পরিশ্রমের মাধ্যমেই তাঁরা ঘুরিয়ে চলেছেন সংসারের চাকা।
কড়ি কাঠের তৈরি কাতলার ওপর প্রায় ২০০ কেজির পাথর বসিয়ে ঘাড়ে জোয়াল বেঁধে এই ঘানি এখনো টেনে চলেছেন বৃদ্ধ আবদুল খালেক প্রামাণিক ও তাঁর স্ত্রী রাহালা। ঘানির টানে ডালার ভেতর সরিষা পিষ্ট হয়ে ফোটা ফোটা তেল পড়ে পাত্রে। স্থানীয় হাটে এই তেল বিক্রি করলেই চলবে সংসার। প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এভাবেই ঘানি টেনে চলেন বৃদ্ধ এই দম্পতি। তাঁদের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার কুনকুনিয়া উত্তর পাড়া গ্রামে।
ভিটেমাটি ছাড়া আবদুল খালেক ও রাহালা দম্পতির আর কোনো জমিজমা নেই। বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখতেই এই ঘানি টানা। আবদুল খালেকের অ্যাজমা রোগের চিকিৎসা করতে কলুর বলদটি বিক্রি করেছেন ১১ বছর আগেই। এর পর আর সামর্থ্য হয়নি গরু কেনার। কেউ সহায়তার হাতও বাড়ায়নি কখনো।
বংশপরম্পরায় তাঁরা ঘানি টানছেন প্রায় ৪৫ বছর ধরে। ১০ বছর বয়স থেকে তাঁর বাবাকে সহযোগিতা করতে ঘানির জোয়াল টানা শুরু করেন আবদুল খালেক। এখন এই ৫৫ বছর বয়সে এসে শরীর আর চলে না। তারপরও মাঝেমধ্যে স্ত্রীকে সহযোগিতা করেন জোয়াল টানতে। দু-তিন মিনিট টানতেই ক্লান্ত হয়ে যায় শরীর। একদিকে বয়স, অন্যদিকে শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ। কিন্তু অভাবের সংসারে একদিন ঘানি না টানলে যে সংসার চলে না। জোটে না এক মুঠো ভাত।
এ ব্যাপারে কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ হাসান সিদ্দিকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিষয়টি জানতাম না। আপনার মাধ্যমেই জানলাম। সরেজমিন দেখে তারপর কিছু করা যায় কিনা দেখব।