সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে প্রায় ১০টি পাটের গুদাম। আগুনে প্রায় ১৭ হাজার মণ পাট ও ৬০ হাজার চটের বস্তা পুড়েছে, যাতে অন্তত ৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
গতকাল সোমবার গভীর রাতে আগুন লাগার পর আটটি ইউনিটের টানা ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে তা নিয়ন্ত্রণে আসে বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা সাফিউল হাসান ভূঁইয়া জানান। তবে অগ্নিকাণ্ডে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানা যায়, ১৩ জন ব্যবসায়ী গোডাউনগুলো ভাড়া নিয়ে পাট মজুত করে রাখতেন। তাঁদের মধ্যে মোকলেছুর রহমান ডাবলুর আড়াই হাজার মণ, ইউনুছ আলী তালুকদারের ১ হাজার ২০০ মণ, আইয়ুব আলীর ৪০০ মণ, শামীম রেজার ২০০ মণ, রিপনের ১ হাজার মণ, শ্রী গজন কুমার সাহার ১ হাজার ২০০ মণ, আসাদুল ইসলামের ৪ হাজার মণ, রজব আলীর ২ হাজার মণ, সোলাইমানের ২ হাজার মণ, আব্দুর রউফ সরকারের ২৫০ মণ ও শ্রী লোটন কুমার কুণ্ডুর ৩০০ মণ পাট ছিল এবং শহিদুল ইসলামের ৬০ হাজার চটের বস্তা ছিল।
এ ছাড়া ওই সব গুদামে আরও অনেক ব্যবসায়ী পাট ও চটের বস্তা মজুত রেখে পরে রপ্তানি করতেন বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
গুদামের শ্রমিকেরা জানান, হঠাৎ করে গতকাল দিবাগত রাত ২টার দিকে এলাকাবাসীর চিৎকার-চেঁচামেচিতে তাঁদের ঘুম ভেঙে যায়। বেরিয়ে এসে দেখেন গুদামে আগুন জ্বলছে। গুদামের সামনের দিকে লাগা আগুন মুহূর্তের মধ্যেই ১০টি গুদামে ছড়িয়ে যায়।
গুদামে থাকা পাটের মালিক আসাদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গুদামে আমার ৪ হাজার মণ পাট ছিল। এর বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। এত বড় ক্ষতি হওয়ায় আমি এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। পরিবার-পরিজন নিয়ে কেমনে দিন চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
আরেক ব্যবসায়ী ইউনুছ আলী বলেন, ‘গুদামে ১ হাজার ২০০ মণ পাট রেখে পরে রপ্তানি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা আর হলো না। রাতের এমন ঘটনায় সব আশা-ভরসা শেষ হয়ে গেল। আগুন নিভলেও রেখে গেল ক্ষতির চিহ্ন।’
উল্লাপাড়া জুট ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, আগুনে ১০টি গুদামে থাকা প্রায় ১৭ হাজার মণ পাট এবং ৬০ হাজার চটের বস্তা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (পাবনা অঞ্চল) সাফিউল হাসান ভূঁইয়া জানান, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে উল্লাপাড়া ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট। পরে পাবনাসহ আশপাশের উপজেলা থেকে যোগ দেয় আরও সাতটি ইউনিট। ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় মঙ্গলবার ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে প্রায় ৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডের সূত্র ও কারণসহ বিস্তারিত জানতে তদন্ত হচ্ছে।’