গত বছরের হিসাবে এবার ১০ দিন আগে আঁটি জাতীয় আম দিয়ে রাজশাহীর আম পাড়ার মৌসুম শুরু হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার। কিন্তু রাজশাহী জেলার সর্ববৃহৎ আমের মোকাম বানেশ্বর বাজারে আম কেনাবেচা করতে দেখা যায়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৌসুম শুরু হলেও এবার এখনো বাগানগুলোতে আমের পরিপক্বতা আসেনি, যার কারণে মৌসুমের প্রথম দিনে জেলার বৃহৎ আমের মোকাম বানেশ্বর বাজারে কোনো আম কেনাবেচা হয়নি।
এদিকে প্রকারভেদে কয়েকটি ধাপে আম পাড়তে দিকনির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে অপরিপক্ব আম পাড়া বন্ধে এবং মানবদেহের ক্ষতিকারক কার্বাইড মিশ্রিত আম বাজারে কেনাবেচা প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার বানেশ্বর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ইউনিয়ন ভূমি অফিস (কাচারি মাঠে) ও কলেজ মাঠে কোনো আম ক্রেতা-বিক্রেতা আসেননি। তবে উৎসুক দু-একজন আমের বাজারে দরদাম দেখতে এসেছেন। কোনো আম কেনাবেচা না হওয়ায় তাঁরা দুপুরের দিকে বাড়ি ফিরে গেছেন।
বাজারে আসা স্বল্পসংখ্যক আমচাষি ও ব্যবসায়ী বলছেন, প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী এবার গতবারের থেকে ১০ দিন আগে আম পাড়া শুরু হয়েছে। তার ওপর এবার সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমের পরিপক্বতা আসতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তবে হয়তো আগাম কিছু গাছে আঁটিজাতীয় আম পাকতে শুরু করেছে।
তারাপুর গ্রামের বাগানমালিক মোমিন উর হক আজকের পত্রিকাকে জানান, গত বছর এই অঞ্চলে পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে এ বছর অনেক বাগানে আমের মুকুল দেখা দেয়। কিন্তু এবার মৌসুমের শুরু থেকে কোনো বৃষ্টিপাত ছিল না। তার ওপর মাত্রাতিরিক্ত দাবদাহে অনেক মুকুল ও কুঁড়ি শুকিয়ে ঝরে গেছে। সম্প্রতি শিলাঝড় ও বৃষ্টিপাত হওয়ায় বেশির ভাগ আম ঝরে গেছে। এখন গাছে শিলার আঘাতে অনেক আম ফেটে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে কিছু আমে পচন রোগ দেখা দিয়েছে। এতে এ বছর বাগানমালিকেরা কিছুটা লোকসানের আশঙ্কা করছেন।
বানেশ্বর বাজারের আম ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এবার কয়েক দিন আগেই আম কেনাবেচা শুরু হলো। তবে আমের পরিপক্বতা না হওয়ায় হয়তো আজকে (প্রথম দিনে) বাজারে আম আসেনি। তবে ৮-১০ দিন পর থেকে আম বাজারে কেনাবেচা শুরু হবে।’
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খ. ম জামাল উদ্দীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এলাকায় নতুন ও পুরোনো মিলে প্রায় ৯০০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। বাগানগুলো থেকে গত মৌসুমে আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ৫০ টন। এবং উৎপাদন হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টন আম। এ বছর প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টন আম উৎপাদন হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।’
জামাল উদ্দীন আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে হয়তো হাতে গোনা দু-একটি গাছে আঁটিজাতীয় আম পাকতে শুরু করেছে। তবে এই আম পুরোদমে পরিপক্ব হতে এক-দুই সপ্তাহ লেগে যাবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জেলার সর্ববৃহৎ আমের বাজার পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজার। তাই আমে কোনো রকম যেন অনিয়ম না হয়, সে ক্ষেত্রে আড়ৎগুলোতে আমাদের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং থাকবে। আর কোন আম কখন পাড়তে হবে, তার একটি দিকনির্দেশনা জেলা প্রশাসন থেকে ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে।’