নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষা কর্মকর্তারা স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে নানা অজুহাতে গণ শোকজ করছেন। যে স্কুলে শোকজ করা হচ্ছে, সে প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষকও বাদ পড়ছেন না।
অপরদিকে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুললেও খোদ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিভাগীয় উপপরিচালকের (ডিডি) কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই ঠিকমতো অফিস না করার অভিযোগও উঠেছে। আজ মঙ্গলবার কার্যালয় দুটিতে গিয়ে তথ্যের সত্যতাও পাওয়া গেছে। সকাল ৯টায় অফিস শুরু হলেও বেলা ১১টায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেককে পাওয়া যায়নি।
সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রাজশাহী মহানগরের চারটি স্কুলের সব শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। স্কুল চারটি হলো–গোলজারবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আটকোষী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাঠানপাড়া শহীদ কামারুজ্জামান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরিদর্শনের পর এসব স্কুলের সবাইকেই শোকজ করা হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
শিক্ষকেরা বলছেন, এখনো বই পাওয়া যায়নি। ক্লাস চলছে ঢিমেতালে। অনেক শিক্ষার্থীরই বই নেই বলে তারা স্কুলে আসার পর খেলাধুলা করে। এ কারণে শিক্ষকদের শোকজ করা অযৌক্তিক।
তাঁরা বলছেন, যে শিক্ষকেরা বই আনতে বাইরে গেছেন, তাঁদেরও শোকজ করা হয়েছে। এটি থেকেই বোঝা যায়, শুধু হয়রানি করতেই এমন শোকজ করা হয়েছে।
নগরের ভেড়িপাড়া মোড়ে একই ভবনে বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষার উপপরিচালক (ডিডি) ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়। ভবনের দোতলায় আজ বেলা ১১টায় গিয়ে ডিডি মো. সানাউল্লাহকে তাঁর অফিসে পাওয়া যায়নি। কক্ষ খোলা থাকলেও অফিসে ছিলেন না শিক্ষা কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান ও তৌহিদুল ইসলাম। পাওয়া যায়নি সহকারী পরিচালক (এডি) নূর আখতার জান্নাতুল ফেরদৌসকেও।
কক্ষে পাওয়া যায়নি সহকারী হিসাবরক্ষক জোবায়ের হোসেন, উচ্চমান সহকারী মোহাম্মদ বাবুল মিয়া এবং অফিস সহকারী মহসিন আলীকেও। তবে অফিসে ছিলেন ডিডির সহকারী আবু হোসেন ও ডেটা এন্ট্রি অপারেটর আলী আকবর।
এ সময় আবু হোসেন জানান, ডিডি গেছেন একটি সভায়। এডি গেছেন পরিদর্শনে। তবে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর আলী আকবর বলেন, ডিডি ও এডি গেছেন হাসপাতালে। শিক্ষা কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান সরকারি সফরে আছেন। অন্যদের ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তারা।
নিচতলায় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে গিয়ে দেখা গেছে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেনও তাঁর কক্ষে নেই। সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ও সহকারী মনিটরিং অফিসার কাওসার হোসেনও দপ্তরে ছিলেন না।
কর্মচারীরা দাবি করেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বাইরে মিটিংয়ে আছেন। কাওসার আছেন ছুটিতে। সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম কোথায়, তা কেউ জানাতে পারেননি।
জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি বাইরে একটি মিটিংয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাও ছিলেন।
শিক্ষকদের গণ শোকজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা ডিডি স্যার বলতে পারবেন। তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী শোকজ করা হয়েছে। শিক্ষকেরা সে অনুযায়ী জবাব দিচ্ছেন।’
ডিডি মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘গণহারে সবাইকে শোকজ করা ঠিক হয়নি। এটা আমরা দেখব।’ তাঁর দপ্তরেই তিনিসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুপস্থিতির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি একটা মিটিংয়ে বাইরে গিয়েছিলাম। আমার পেছনে পেছনে অন্যরা বের হয়েছে। সবার একসঙ্গে বের হওয়া ঠিক হয়নি। কেন তাঁরা এভাবে বাইরে গেলেন, সেটা নিয়ে আমি তাঁদের শোকজ করে জবাব চাইব।’