ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধ
পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পারমাণবিক জ্বালানি আনতে প্রটোকল স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার সাইবেরিয়ায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর ও রাশিয়ার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্সি দেইরি নিজ নিজ পক্ষে এই প্রটোকলে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ফ্রেশ ফুয়েল হিসেবে রাশিয়ার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের কাছ থেকে ইউরেনিয়াম কিনবে বাংলাদেশ।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন রসাটমের পক্ষ থেকে পাঠানো এক ইমেইল বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
এতে জানানো হয়, রূপপুরের জন্য রাশিয়া থেকে জ্বালানি আসবে বিশেষ বিমানে। এরপর সড়ক পথে বিশেষ নিরাপত্তায় পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে নিয়ে যাওয়া হবে। এই জ্বালানি পরিবহন করতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাকে (আইএইএ) অবহিত করতে হয়। সেই আনুষ্ঠানিকতাও সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি পারমাণবিক স্থাপনা হিসেবে উন্নীত হবে। জ্বালানি হিসেবে প্রথম ধাপের পর আরও দুই ধাপে ইউরেনিয়াম সাধারণ চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া থেকে বিনা মূল্যে পাচ্ছে বাংলাদেশ।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান জানান, আগামী বছর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়াম দেশে আসবে। ফলে আগামী বছরের ডিসেম্বর থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় ইউনিট গ্রিডে যাবে ২০২৫ সালে।
রসাটম ইমেইল বার্তায় আরও জানায়, রূপপুরের জন্য গতকাল বুধবার ৯ আগস্ট রসাটমের জ্বালানি কোম্পানি টেভেলের একটি প্রতিষ্ঠান নভোসিবিরক্ত কেমিক্যাল কন্সেন্ট্রোস প্ল্যান্টে (এনসিসিপি) এই জ্বালানির এক্সসেপটেন্স ইন্সপেকশন সম্পন্ন হয়েছে। এতে অংশ নেয় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, এনসিসিপি, টেভেল ও এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের (এএসই) প্রতিনিধিরা। সফলভাবে পরিদর্শন সম্পন্ন হওয়ার পরই প্রটোকলে স্বাক্ষর করেন ড. শৌকত আকবর ও আলেক্সি দেইরি।
ইমেইল বার্তায় বলা হয়, প্রটোকল স্বাক্ষর হওয়ার পর এই পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদনকারী কারখানা থেকে বাংলাদেশে শিপমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেল। আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই এই জ্বালানি বাংলাদেশে পৌঁছাবে।
টেভেলের কোয়ালিটি ডিরেক্টর আলেক্সান্দার বৃথালভ জানান, তিনি অত্যন্ত আশাবাদী, এই জ্বালানি আবারও রুশ পারমাণবিক প্রযুক্তির শ্রেষ্ঠত্ব ও সর্বোচ্চ নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণ করবে।
রূপপুর প্রকল্পের জেনারেল কন্ট্রাক্টর এএসইর ভাইস প্রেসিডেন্ট আলেক্সি দেইরির বরাত দিয়ে রোসাটম জানায়, রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ সম্পূর্ণভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে। রোসাটমের প্রকৌশল শাখা সব ক্ষেত্রেই তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পুরোপুরিভাবে পূরণ করছে। প্রকল্প সাইটে জ্বালানি পৌঁছানোর আগেই প্রথম ইউনিট জ্বালানি লোডিংয়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে। এ ছাড়া রিয়্যাক্টরে জ্বালানি লোডিংয়ের আগ পর্যন্ত নিরাপত্তা চাহিদা পূরণ করেই এই জ্বালানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে।