জয়পুরহাট প্রতিনিধি
জয়পুরহাটে নিজের ঘর থেকে বৃদ্ধ সৈয়দ আলী আকন্দের (৮৫) গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তাঁর ভাতিজাসহ (শ্যালকের ছেলে) চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, ঘর থেকে টাকা চুরির সময় চিনে ফেলায় তারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।
আজ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম।
পুলিশ বলছে, গতকাল রোববার এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী (সৈয়দ আলী আকন্দের শ্যালক আকামুদ্দিনের ছেলে) হারুনুর রশিদ হারুনকে কালাই উপজেলার শিকটা গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তারই দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই গ্রামের আবু তালেব ফকিরের ছেলে (গ্রাম পুলিশ) সুজন মিয়া (২৩), মোবারক আলীর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ওয়াজেদুল (৩৫) এবং মোহাম্মদ আলীর ছেলে নাজির হোসেনকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা ছুরিসহ বৃদ্ধের ঘর থেকে চুরি হওয়া দলিলের ব্যাগটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়। আসামিরা ঘরের ট্রাঙ্ক থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে যান। সেই অর্থের ৬২ হাজার ৫০০ টাকা তাদের কাছে জব্দ করা হয়েছে। বাকি টাকা তাঁরা খরচ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম জানান, গত ১ ডিসেম্বর (শুক্রবার) সকালে কালাই উপজেলার শিকটা গ্রামের সৈয়দ আলী আকন্দের (৮৫) নিজের শোয়ার ঘরে গলা কাটা লাশ পরে আছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি হাতাপালের মর্গে পাঠানো হয়।
এরপর তদন্তে জানা যায়, গত ৩০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে অজ্ঞাত আসামিরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে কালাই থানায় মামলা হয়। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের শনাক্ত করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাতে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম বলেন, ‘আসামিরা পুনট বাজারে নাজির হোসেনের দোকানে এ ঘটনার পরিকল্পনা করেন। এ সময় এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হারুনুর রশিদ হারুন তাঁদের জানান যে, তাঁর ফুপা (ভুক্তভোগী সৈয়দ আলী আকন্দ) ব্যাংকে টাকা রাখতেন না। প্রায় ২০ বিঘা জমিতে চাষ করা আমন ধান বিক্রির মোটা অঙ্কের টাকা তাঁর ফুপা বাড়িতেই রেখেছেন। এই কথা হারুনুর রশিদ হারুন অপর আসামিদের সঙ্গে শেয়ার করেন। এরপর তাঁরা সেই টাকা চুরি করে ভাগাভাগি করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা টাকা চুরি করতে গেলে ভুক্তভোগী সৈয়দ আলী তাঁর শ্যালক আকামুদ্দিনের ছেলে হারুনুর রশিদকে চিনতে পারেন। এ সময় হারুনের কাছে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে ঘরের স্টিলের বাক্সের তালা ভেঙে দুই লাখ টাকা এবং একটি প্লাস্টিকের বাজার করা ব্যাগের ভেতর থাকা দলিলসহ ব্যাগ নিয়ে নেয়। তখন সৈয়দ আলী চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে প্রথমে তাঁর মুখে কাপড় গুঁজে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে গ্রেপ্তার হওয়া সুজন মিয়া ছুরি দিয়ে সৈয়দ আলীর কণ্ঠনালীর নিচে আঘাত করেন। পরে ছুরি দিয়ে গলার বাম পাশে আঘাত করা হয়। ততক্ষণে সৈয়দ আলী নিস্তেজ হয়ে পড়েন। তখন টাকা ও দলিলের ব্যাগ নিয়ে আসামিরা দ্রুত পালিয়ে যান।’