রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে দরজা ও লিফট স্থাপনে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশনকে অবিলম্বে কালো তালিকাভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। আজ সোমবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে সংগঠনটি।
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) উম্মে কুলসুম সম্পা এ স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। তিনি যথাযথ প্রক্রিয়ায় এটি উপদেষ্টার কাছে পৌঁছে দেবেন বলে জানিয়েছেন।
স্মারকলিপির অনুলিপি ডাকযোগে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া গণপূর্তের রাজশাহী জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এবং রাজশাহীর গণপূর্ত বিভাগ-১ ও গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলীকেও অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশন রামেক হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিট নির্মাণের কাজ পায়। ১০ কোটি ৯৫ লাখ ৯০ হাজার টাকার এই কাজের মধ্যে স্মার্ট দরজা লাগানোর কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদার সৈয়দ জাকির হোসেন কাঠের দরজা লাগান। হাসপাতাল থেকে আপত্তি জানালে দরজা তিনটি পরবর্তী সময়ে পাল্টে কাচের করে দেওয়া হয়।
একইভাবে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী বেড কাম প্যাসেঞ্জার লিফট লাগানোর কথা ছিল। ঠিকাদার বেড লিফট না লাগিয়ে প্যাসেঞ্জার লিফট লাগিয়ে দেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আপত্তির পর সেটা ঠিক করে দেওয়া হলেও স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী লিফট সরবরাহ করা হয়নি। তদন্তে উঠে এসেছে, চাওয়া হয়েছিল ‘এ’ গ্রেডের লিফট। সরবরাহ করা হয়েছে ‘সি’ গ্রেডের লিফট। এ দুই লিফটের দামের পার্থক্য অর্ধকোটি টাকা। তা ছাড়া চাওয়া হয়েছিল ফায়ার প্রটেকটেড লিফট, কিন্তু দেওয়া হয় সাধারণ লিফট।
এ জালিয়াতি ধরা পড়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও গণপূর্তের নির্দেশে ঠিকাদার লিফট খুলে নিয়ে যান। ঠিকাদারকে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী লিফট লাগাতে বলা হয়। এরপর ঠিকাদার লিফট আমদানি করতে একটি এলসি খুলেছেন। সেই এলসির মেয়াদ পার হয়ে গেছে গত ৮ ডিসেম্বর। কিন্তু ঠিকাদার এখনো লিফট এনে লাগাননি। এ কারণে পাঁচতলার আইসিইউর মুমূর্ষু রোগী ও তাঁদের স্বজনদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘ঠিকাদার অনিয়ম করে অর্ধকোটি টাকা অতিরিক্ত লাভ করতে গিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বেকায়দায় ফেলেছেন। তাতে শত শত রোগী দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তদন্তে জালিয়াতি প্রমাণিত হলেও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, যা আমাদের অবাক করেছে। আমাদের আরও অবাক করেছে যে, এমন ভয়াবহ জালিয়াতি ধরা পড়ার পরও ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-১ থেকে আরেকটি কাজ পেয়েছে। সম্প্রতি তাকে সরকারি কর্ম কমিশনের রাজশাহী কার্যালয়ে ৬০ লাখ টাকার এসি এবং আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম সরবরাহের কাজ দেওয়া হয়েছে।’
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘জালিয়াতি ধরা পড়ার পর সংশ্লিষ্ট বিভাগ অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে ওই ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত তো করেইনি, বরং তাঁকে আবার নতুন কাজ দেওয়া হয়। আমাদের আশঙ্কা, অসাধু এই ঠিকাদার আবারও অনিয়ম করে সংশ্লিষ্টদের বেকায়দায় ফেলবেন। গচ্চা যাবে সরকারি অর্থ।’
স্মারকলিপিতে ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশনকে দ্রুততম সময়ে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী রামেক হাসপাতালে লিফট লাগাতে বাধ্য করা এবং অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে দ্রুত কালো তালিকাভুক্ত করার দাবি জানানো হয়। না হলে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
স্মারকলিপি দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মো. লিয়াকত আলী, সাধারণ সম্পাদক মো. জামাত খান, উপদেষ্টা আকবারুল হাসান মিল্লাত, রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভে ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মাহমুদ হাসান, নারীনেত্রী সেলিনা বেগম, রাজশাহী ওয়েবের সভাপতি আঞ্জুমান আরা পারভীন লিপি, সমাজসেবক গোলাম নবী রনি প্রমুখ।