হোম > সারা দেশ > রাজশাহী

মিলেমিশে যমুনার বালু লুট বিএনপি-যুবলীগ নেতার

গনেশ দাস, বগুড়া

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২: ০৪
আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২: ০৪
যমুনা নদীর বিভিন্ন চর থেকে অবৈধভাবে তুলে স্তূপ করে রাখা বালু। সম্প্রতি বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের শহরাবাড়ী এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

বগুড়ায় যুবলীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিলেমিশে যমুনা নদীর বিভিন্ন চর থেকে বালু তুলে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুবলীগ নেতার নামে ইজারা নেওয়া বালুমহাল ছাড়াও বিভিন্ন চর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে। যদিও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয় এক বিএনপি নেতা উচ্চ আদালতে রিট করে স্থগিতাদেশ পেলেও তা মানছেন না বিএনপি ও যুবলীগের অভিযুক্ত নেতা-কর্মীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ধুনট উপজেলা যুবলীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেন ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের চৌবেড় মৌজায় ৩৯ একর বালুমহাল বাংলা সনের গত পহেলা বৈশাখ থেকে এক বছরের জন্য ৫৭ লাখ টাকায় ইজারা নেন। এরপর তাঁর সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা যোগ দিয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলার বোহাইল, আওলাকান্দী, ধুনটের শহরাবাড়ী, শিমুলবাড়ী, ভান্ডারবাড়ী, বৈশাখী কৈয়াগাড়ী, ভূতবাড়ী এলাকায় যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন শুরু করেন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বালু উত্তোলনের দৃশ্যপটও পাল্টে যায়। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে গেলে বালুমহাল নিয়ন্ত্রণে নেন স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে তাঁরা যুবলীগ নেতা বেলালের সঙ্গে সমঝোতা করে ৩০ শতাংশ বালুমহাল কিনে নিয়ে যৌথভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেন। আর এ কারণে বিভিন্ন মামলা থেকে রেহাই পেয়ে যান এই যুবলীগ নেতা।

এদিকে একটি বালুমহাল ইজারা নিয়ে যমুনা নদীর বিভিন্ন চর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন ধুনট উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম তালুকদার। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন। তবে আদালতের আদেশ ইজারাদার থেকে শুরু করে উপজেলা প্রশাসনকে দেওয়া হলেও বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি।

বালুমহালের ইজারাদার বেলাল হোসেন বলেন, ‘শুনেছি হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। তবে আদেশের কোনো কপি পাইনি। আমার ইজারা চলতি বাংলা সনের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত বহাল আছে। আমি ইজারা নেওয়া বালুমহাল থেকে স্বল্প পরিসরে বালু তুলছি।’ বিএনপির নেতাদের সঙ্গে নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির সঙ্গে মিলেমিশে থাকাটাই ভালো। আর এসব কারণে আমার নামে কোনো মামলা হয়নি।’

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির সঙ্গে মিলেমিশে থাকাটাই ভালো। আর এসব কারণে আমার নামে কোনো মামলা হয়নি।

বেলাল হোসেন, ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক, ধুনট উপজেলা যুবলীগ

এদিকে বালু উত্তোলনের ফলে শহরাবাড়ী খেয়াঘাটের পাশের চরসহ শিমুলবাড়ীতে ভাঙনে জেগে ওঠা চর যমুনায় বিলীন হয়েছে। বৈশাখী চরেরও একই অবস্থা। শহরাবাড়ী ঘাট থেকে অতিরিক্ত বালুবোঝাই ট্রাক চলাচল করায় কয়েক কোটি টাকার নির্মিত শহরাবাড়ী থেকে ধুনট উপজেলা পর্যন্ত সড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে। এ নিয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন, মানববন্ধন করেও কোনো প্রতিকার পায়নি এলাকাবাসী।

ইজারাদারের কাছ থেকে বালুমহালের ৩০ শতাংশ কিনে নিয়েছেন বিএনপির স্থানীয় নেতারা। সেই হিসাবেই তাঁরা বালু তুলছেন।

বেলাল হোসেন বাবু, বিএনপি নেতা ও ভান্ডারবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান

যুবলীগ নেতার সঙ্গে মিলেমিশে বালু তোলা প্রসঙ্গে উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও গোঁসাইবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রাশেদুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ‘আমাকে নিয়ে গুজব ছড়ানো হয়। এ কারণে শুরুতে থাকলেও এখন বালুর ব্যবসা থেকে সরে এসেছি। এ ছাড়া বর্তমানে বালু তোলা বন্ধ আছে।’ তিনি আরও বলেন, বিএনপির নেতাদের যাঁরা বালু তোলার সঙ্গে জড়িত, তাঁরা আওয়ামী লীগ আমল থেকেই বালুর ব্যবসা করেন।

ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বিএনপি নেতা বেলাল হোসেন বাবু বলেন, ইজারাদারের কাছ থেকে বালুমহালের ৩০ শতাংশ কিনে নিয়েছেন বিএনপির স্থানীয় নেতারা। সেই হিসাবে তাঁরা বালু তুলছেন।

ধুনট উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, ‘উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের আনঅফিশিয়াল কপি পেয়েছি। বালু উত্তোলনকারীদের মৌখিকভাবে বন্ধ রাখতে বলেছি। এরপরও বালু তোলা হলে অভিযান চালানো হবে।’

জয়পুরহাটে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে গভীর নলকূপ দখলের অভিযোগ

শিবগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের বেড়া নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বে জাহিদ ও মুজাহিদ

রাজশাহীতে স্কুলশিক্ষককে আটকে মুক্তিপণ আদায়, ২ যুবক কারাগারে