আব্দুল কাদের সজল, বড়াইগ্রাম (নাটোর)
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ বড়াল নদীতে অপরিকল্পিতভাবে সুইসগেট নির্মাণ, অবৈধ স্থাপনা, পানি দূষণ ও দখলদারের কারণে এখন তা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এভাবেই বাংলাদেশের বৃহত্তম চলনবিলের নদী, খাল ও বিলগুলো রক্ষাকারী বড়াল নদী হারিয়ে যাচ্ছে। এ নদীর তীরে গড়ে তোলা ১ হাজার ১৭৮টি অবৈধ স্থাপনা ও পানি দূষণের ১৪টি উৎস শনাক্ত করেছে প্রশাসন।
বড়াইগ্রাম সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চারঘাট থেকে যমুনা নদীর সংযোগ ২১০ কিলোমিটারের মধ্যে বড়াইগ্রাম অংশের বড়াল নদীর আনুমানিক দৈর্ঘ্য ৪০ কিলোমিটার, প্রস্থ ৬০ ফুট, গড় গভীরতা প্রায় ১৫ ফুট। এ ছাড়া কয়েকটি বৃহৎ শিল্প কারখানা, বড়াল নদীর পাড়ের দুইটি পৌরসভার ৮টি সরকারি ক্লিনিক, পোলট্রি খামার, হোটেল বা রেস্টুরেন্টের বর্জ্য নিষ্কাশন লাইন সরাসরি নদীর সঙ্গে যুক্ত আছে। এসব কারণে পানি দূষণ অব্যাহত রয়েছে।
বড়াল রক্ষা আন্দোলনের বড়াইগ্রাম উপজেলা কমিটির সদস্যসচিব ডিএম আলম বলেন, বড়াল নদী একসময় বহমান ছিল। এ নদীতে চলমান প্রবাহের কারণে বহু হাটবাজার, থানা ও সরকারি বিভিন্ন অফিস গড়ে উঠেছে। আগে এই নদী দিয়ে গয়নার নৌকাসহ বড় বড় নৌকা চলাচল করত। এ ছাড়াও কলকাতা থেকে গঙ্গা নদী হয়ে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নৌকা করে কুষ্টিয়া শিলাইদহ ও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে তাঁর কুঠিবাড়িতে যাতায়াত করতেন।
একই সময় পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলায় বড়াল নদীর ওপরে আড়াআড়িভাবে বাঁধ দিয়ে তিনটি পাকা রাস্তা ও একটি এক দরজার সুইসগেট নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া বড়াল নদীর ওপর ছোটবড় ৫৬টি ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। যার কারণে আস্তে আস্তে জনগণ এটি দখল করে বড় বড় স্থাপনা, বাড়িঘর, দোকানপাট নির্মাণ ও দূষণ করে বড়াল নদীকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে।
বনপাড়া পৌরসভার মেয়র কেএম জাকির হোসেন বলেন, বড়াল নদীর বনপাড়া অংশে বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। কিছু মানুষ এ নদীর পাড়ে বসবাস করে। তাঁদের জন্য এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড উপবিভাগীয় প্রকৌশলী খালেদ বিন অলীদ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ডিজাইনার) নাসিমা জাহানকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরও বলেন, দূষণ রোধে উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। উচ্ছেদ এবং খনন এক সঙ্গে করার পরিকল্পনা আছে। যাতে উচ্ছেদের পরে আর কেউ দখল করতে না পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারিয়াম খাতুন বলেন, নদী প্রবাহে দখলদার উচ্ছেদ করে নদী দখলমুক্ত করতে বড়াল নদীর প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা, রক্ষা, দূষণ ও সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা সভা করা হয়েছে। এ ছারা ভৌগোলিক অবস্থান নির্ণয়, সিএস রেকর্ড অনুযায়ী বড়াল নদীর সীমানা চিহ্নিত করা হয়। বড় বড় স্থাপনাগুলো সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার রিপোর্ট অনুযায়ী উচ্ছেদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, পদ্মা-যমুনার সঙ্গেই বড়াল নদীকে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের অন্তর্ভুক্ত করে সচল করা হবে।