রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে খাসপুকুর ইজারার ক্ষেত্রে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির তিন বছরের জন্য ইজারা দেওয়া ৩০টি পুকুর মেয়াদ শেষের আগেই নতুন করে ইজারার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননা করে আরও ২৯ পুকুর ইজারার প্রক্রিয়া চলছে।
মৎস্যজীবীদের পক্ষে শরিফুল ইসলাম বিশু নামের এক ব্যক্তি গত সোমবার জেলা প্রশাসকের কাছে এই লিখিত অভিযোগ দেন। এর অনুলিপি দেওয়া হয়েছে বিভাগীয় কমিশনারকে। অভিযোগে শরিফুল উল্লেখ করেন, ১৪৩১ থেকে ১৪৩৩ বঙ্গাব্দের জন্য ৯০টি খাসপুকুর ইজারা দেওয়া হয়েছে। এক বছর না যেতেই এর মধ্যে ৩০টি ফের ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জানা গেছে, ২ জানুয়ারি ২ হাজার ২৩৬ পুকুর ইজারা দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক আবুল হায়াত। তালিকায় আগে ইজারা দেওয়া ৩০ ও হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা ২৯টি পুকুর রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, জালিয়াতি করে এগুলোর ইজারা দেখানো হয়েছিল।
ইউএনও বলেন, ১৪৩১ থেকে ১৪৩৩ বঙ্গাব্দের জন্য গত মে মাসে ৬১৫ পুকুর ইজারা দেওয়া হয়। পরে দেখা যায়, ৫৯ পুকুর ইজারা দেওয়া হয়েছে জালিয়াতি করে।
তাই এসব পুকুরের ইজারা বাতিল করে ইজারা তালিকায় আনা হয়েছে। এসব পুকুরের ইজারার মূল্য পরিশোধের যে ব্যাংক চালানের কপি জমা দেওয়া হয়, সেগুলো জাল। তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার, এসি ল্যান্ড জাহিদ হাসানের স্বাক্ষরও ইজারা দলিলে স্ক্যান করে বসানো।
শরিফুল বলেন, ‘গত বছরের ৮ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত চালানের মাধ্যমে ইজারামূল্য গ্রহণ করে ইজারা কার্যক্রম সম্পন্ন করেছিল তৎকালীন উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি। আওয়ামী সরকার পতনের পর সদস্যসচিব বদলি হয়েছেন। এখন স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট আমাদের ইজারা নেওয়া পুকুরগুলো কেড়ে নিতে চায়। তারা এসি ল্যান্ড অফিসের কিছু কর্মচারীকে হাত করে আগের ইজারা ফাইল থেকে আসল চালানের কপি গায়েব করেছে।’
নথিপত্রে দেখা গেছে, উপজেলা প্রশাসন ৫৫টি পুকুরের বিপরীতে জমা দেওয়া চালান সোনালী ব্যাংকের গোদাগাড়ী শাখায় পাঠিয়ে যাচাই করেছে। সোনালী ব্যাংক থেকে দেওয়া চিঠিতে সঠিক জমাকারী ও জালিয়াতি করা নাম/প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শরিফুলের প্রতিষ্ঠানগুলো জালিয়াতি করেছে। অথচ শরিফুলের কাছে থাকা চালানের কপি সরকারি স্বয়ংক্রিয় চালান যাচাই ওয়েবসাইটে সার্চ দিয়ে দেখা গেছে, সবগুলো সঠিক। গত বছরের ৮ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ৩০ চালানের মাধ্যমে টাকা জমা দেওয়া হয়। শরিফুলের প্রশ্ন, ওই সময় তিনি চালানের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েও কেন এসি ল্যান্ড অফিসে চালানের ভুয়া কপি জমা দিতে যাবেন। সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিতে চাইলে তো তিনি ব্যাংকে টাকা জমা দিতেন না।
জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব ও এসি ল্যান্ড শামসুল ইসলাম বলেন, ‘আগে আমার অফিসের যাঁরা পুকুর ইজারার কাজ করতেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমিও শুনেছি। তাই তাঁদের সরিয়ে নতুন ছেলেকে দিয়ে কাজ করাচ্ছি। এরপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’
হাইকোর্টের আদেশ অবমাননা
তালিকায় ২৯টি পুকুর এসেছে, যেগুলো ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি বলছে, এসব পুকুর ইজারা নেওয়া হয়েছিল চালান জালিয়াতি করে; অথচ হাইকোর্টে রিট থাকায় এগুলোর চালান জমা দেওয়া হয়নি।
এবার ১৪৩২-১৪৩৪ বঙ্গাব্দের জন্য এই ২৯ পুকুরের তালিকা প্রকাশের পর রাঙামাটি মৎস্যচাষি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি সেরাজুল ইসলাম উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবকে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন। সেরাজুলের পক্ষে আইনজীবী শামসুল হক ১৫ জানুয়ারি এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
এসি ল্যান্ড শামসুল ইসলাম বলেন, ‘এই পুকুরগুলোর চালানও জাল ছিল। সে জন্য আমরা লিগ্যাল নোটিশের কোনো জবাব দিইনি। তারপরও আমরা জবাব রেডি করছি। সেটা পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’