পাবনার চাটমোহর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শুকিয়ে যাওয়া গুমানী নদীতে মাটিকাটার মহোৎসব শুরু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ছত্রছায়ায় নদী থেকে মাটি কেটে সরবরাহ করা হচ্ছে অবৈধভাবে স্থাপিত ইট ভাটাগুলোতে। কিন্তু এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ‘চলনবিল রক্ষা আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সরেজমিন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নায়েব আলী ও চার নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন গুমানী নদীর নিমাইচড়া পশ্চিমপাড়া, ধানকুনিয়া মন্ডলবাড়ি ও মির্জাপুর এলাকায় দিনে–রাতে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন। নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও নিমাইচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান খোকনের ছত্রছায়ায় তাঁরা এই মাটি কাটার মহোৎসবে মেতেছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
নিমাইচড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, মাটি কেটে নেওয়ার ফলে একদিকে পরিবেশ যেমন হুমকির মুখে পড়েছে, তেমনি দিনে ও রাতে মাটিবোঝাই ডাম্প ট্রাক ও শ্যালোইঞ্জিন চালিত ভটভটি গাড়ি চলাচল করায় এলাকার সড়কগুলো বিনষ্ট হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নায়েব আলী গুমানী নদীর মাটি কাটার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘গ্রামের মানুষের স্বার্থে বিভিন্ন গর্ত ভরাট করে দিচ্ছি। কয়েকজন ভাগীদার মিলে গত ৪–৫ দিন ধরে এই মাটি কাটছেন।’ তাঁদের মাটি কাটা বাণিজ্যের সঙ্গে নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খোকনও রয়েছেন বলে জানান নায়েব মেম্বার।
নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও নিমাইচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান খোকন বলেন, ‘মাটি কাটার সঙ্গে নাই বললে ভুল হবে। আছি সহযোগিতায়। গ্রামের কিছু ছোট ভাই কাটছে, কিছু করে খাচ্ছে, আমি তাদের সহযোগিতা করছি এই আর কি। তারা যদি আমার নাম বলে তাহলে কি করার আছে। আর যেখানে মাটি কাটছে সেটা গুমানী নদী নয়, ওটাকে বলে বাটা গাঙ।’
এর আগে, ২০ মার্চ সংগঠনটি একই দাবিতে পাবনা জেলা প্রশাসক, চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু প্রতিকার মেলেনি। বরং মাটি কাটা আরও বেড়েছে।
এ বিষয়ে চাটমোহর ইউএনও মো. রেদুয়ানুল হালিম বলেন, ‘নদীর মাটি কাটা অপরাধ। নদী থেকে মাটি কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। তাদেরকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
তবে আগের অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও রেদুয়ানুল হালিম বলেন, ‘এর আগের অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আজকের অভিযোগটি পেয়েছি। মাটি কাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান নিয়মিত চলছে। বেশ কয়েকটি অভিযান ইতিমধ্যে পরিচালিত হয়েছে। কিছু ব্যাটারি জব্দ করে আনা হয়েছে। আমরা যখন অভিযানে যাই তখন তারা পালিয়ে যায়। কিন্তু পরে তারা লুকিয়ে রাতের আধারে মাটি কাটে। আসলে সব সময় তো নজরদারি রাখা সম্ভব হয় না। তবে মাটিকাটা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অভিযান চলবে।’