আব্দুল কুদ্দুস মুন্সী শৈশবে মা-বাবার ওপর অভিমান করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর আর তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। প্রায় ৭০ বছর পর ফেসবুকের কল্যাণে পরিচয় মেলে বৃদ্ধ আব্দুল কুদ্দুসের। স্ত্রী, সন্তান, নাতি-নাতনি নিয়ে বর্তমানে বসবাস করছেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বারুইপাড়া গ্রামে। অবশেষে আপনজনদের খুঁজে পেয়েছেন তিনি। আব্দুর কুদ্দুস মুন্সীর বয়স এখন প্রায় ৮৫ বছর।
স্বজনেরা জানান, ছেলের আশায় এখনো পথ চেয়ে আছেন আব্দুল কুদ্দুসের শতবর্ষী মা। বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই।
স্বজনদের প্রতিও অনেকে সন্দেহ করতে শুরু করেন। সম্পত্তির লোভে পিতা-মাতার একমাত্র পুত্রসন্তান আব্দুল কুদ্দুসকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেন। ৭৮ বছর পর ঠিকই ফিরে এলেন আব্দুল কুদ্দুস মুন্সী। সাত বছরের সেই ছোট্ট শিশুটি আজ ৮৫ বছরের বৃদ্ধ।
আব্দুল কুদ্দুস মুন্সী বলেন, কিছুদিন আগে আইয়ুব আলী নামের পরিচিত একজনের কাছে তাঁর হারিয়ে যাওয়ার গল্প বলেন। সেই ঘটনা ফেসবুকে আপলোড দেন আইয়ুব আলী। সেখানে তিনি শুধু মা-বাবা ও নিজের গ্রাম বাড্ডার নাম বলতে পারেন। পরে ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে বাড্ডা গ্রামের লোকজনের নজরে আসে। একপর্যায়ে আব্দুল কুদ্দুসকে খুঁজে পান তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
প্রথম ভিডিও আপলোড করা আইয়ুব আলী বলেন, ‘আব্দুল কুদ্দুস মুন্সীর হারিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও আমার ফেসবুক পেজে আপলোড করি। আর ফেসবুকে ওই পোস্টের ওপরে লিখেছিলাম যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার এই বৃদ্ধ আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে হারিয়ে গিয়ে পরিবারবিচ্ছিন্ন। কেউ যদি তাঁর কথা শুনে চিনতে পারেন। এরপর বহু মানুষ সেই পোস্ট শেয়ার করেন। বিদেশে কিছু মানুষ ওই এলাকার আমার ফ্রেন্ড লিস্টে আছেন, তাঁরা দেখেন। এভাবেই আব্দুল কুদ্দুস খুঁজে পান তাঁর স্বজনদের।’
হারিয়ে যাওয়ার দিনের সেই ঘটনা জানতে চাইলে আব্দুল কুদ্দুস মুন্সী বলেন, ‘আমি ফুফুর বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে আত্রাই সিংসাড়া গ্রাম পর্যন্ত চলে আসি। তখন প্রায় সন্ধ্যা, সে সময় খয়মুন নামের এক বৃদ্ধার সঙ্গে দেখা হয়। তাঁর বাড়িতে যাওয়ার কথা বলি। তিনি ভিক্ষা করে সংসার চালান। আমার কথা শুনে তাঁর গ্রামের জনৈক সাদেকের ছেলে সাদেকের বাড়িতে নিয়ে যান। সাদেকের কোনো সন্তান না থাকায় আমাকেই ঠাঁই দেন বাড়িতে। সেখানেই বড় হই আমি। এমনকি তাঁরাই আমাকে মুসলমানি দেন। পরে পনের বছর বয়সে সাদেক একই এলাকার চৌউড়বাড়ি গ্রামে তাঁর এক আত্মীয়ের মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে দেন। সাদেকের বাড়িতে কয়েক বছর থাকার পর আমার শাশুড়ি বাগমারা উপজেলার ঝিকরা ইউনিয়নের বারুইপাড়া গ্রামের নিঃসন্তান সুন্দর বেগম ও কপিজান নামের দুই বোনের বাড়িতে আমাকে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তখন থেকেই বারুইপাড়া গ্রামে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস শুরু করি। বছর দুয়েক পর সুন্দর বেগম আমাকে ১২ বিঘা জমি লিখে দেন।
মা তাঁকে কীভাবে চিনলেন—জানতে চাইলে আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে প্রথম যখন কথা বলি তখন আমার মা আমাকে বলে, তুই আমার হারিয়ে যাওয়া আব্দুল কুদ্দুস বাবা। তোর ছোট বেলায় হাত কেটে গিয়েছিল। মায়ের মুখে এ কথা শোনার পরে আমি বলি, মা তোর কুদ্দুসের কোন হাত কেটে গিয়েছিল। তখন মা বলে, বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল। তখন আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। আর বুঝতে পারি যে আমার মা তিনিই।
বাগমারার বারুইপাড়া গ্রামে এ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আজ শুক্রবারই মায়ের সঙ্গে দেখা করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়ার কথা আব্দুল কুদ্দুস মুন্সীসহ তাঁর ছেলেদের। আর স্বজনদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা তো চলছেই।