অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এক কিশোরীকে (১৩) যৌন হয়রানি করার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের উপপ্রধান চিকিৎসক রাজু আহমেদকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩১তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা বলেন, যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তদন্ত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসক রাজু আহমেদকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩০ অক্টোবর রাতে রাজশাহী নগরের তালাইমারি এলাকার আমেনা ক্লিনিকে এক কিশোরীকে (১৩) যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে রাজু আহমেদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পরদিন ভুক্তভোগী শিশুটির মা বাদী হয়ে নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। ভুক্তভোগী শিশুর মা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের শিক্ষক। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক আন্দোলন করার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর রাজু আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ঘটনা ঘটার ১৪ দিন পর ১৩ নভেম্বর মামলার বাদী শিক্ষিকাসহ আরও দুজনের নামে রাজশাহী কোর্টে বিভিন্ন ধারায় পাল্টা মামলা করেন রাজু আহমেদ। রাজু আহমেদের নামে মামলা হওয়ার পরে তিনি হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার শর্তে জামিন নিয়েছিলেন। বাদীপক্ষ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে রাজুর জামিন বাতিলের আবেদন করে। পরে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি রাজুর জামিন বাতিল করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মো. এমদাদুল হক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ সেল এবং সিন্ডিকেট সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি এবং যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধবিষয়ক অভিযোগ কমিটিকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁদের প্রতিবেদনে চিকিৎসক রাজু আহমেদকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসক রাজু আহমেদ, ভুক্তভোগী কিশোরী ও তাঁর মাসহ মোট ২২ ব্যক্তির বিভিন্ন সময় সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২৬তম সিন্ডিকেট সভায় চিকিৎসক রাজু আহমেদকে চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে তাঁর (রাজু) আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তাঁকে কেন চাকরিচ্যুত করা হবে না—এই মর্মে চিঠির জবাব দিতে বলা হয়েছিল। পরে ১৩ ফেব্রুয়ারি ৫২৯তম সিন্ডিকেট সভায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই প্রতিবেদনের সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা শেষে সোমবার রাতে স্থায়ী বহিষ্কারের এই সিদ্ধান্ত নেয় সিন্ডিকেট।