বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন, ‘একুশের বইমেলা দিয়ে শুধু একটা শহর চলতে পারে। একটা জাতি চলতে পারে না। বইমেলা হতে হবে প্রতিটি স্থানে।’
আবু সায়ীদ বলেন, ‘একটা জাতির কি একটা জায়গায় মেলা দিয়ে চলতে পারে? চলতে পারে না। প্রতিটি জায়গায় মেলা হতে হবে। সরকার একটা চেষ্টা মাঝেমধ্যে করে, কিন্তু সফল হয় না। কারণ, প্রকাশকেরা আসতে পারেন না এত দূরে, এত টাকা খরচ করে। ঢাকার বাইরে বইমেলা করে টাকা ওঠে না।’
আজ শনিবার বিকেলে রাজশাহীতে বই বিক্রেতা ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বাতিঘরের শাখার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এসব কথা বলেন।
বিদ্যালয়ে বইপড়া কমে যাওয়ার ইতিহাস বলতে গিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘এরশাদ সরকার আসার পরে একটা কমিটি গঠিত হলো। কর্নেল এনাম কমিটি। সেই কমিটি এসে কী করল? মানে আমাদের শেষপর্যন্ত যা আশা-ভরসা ছিল, উনি সেটাকে শেষ করে দিলেন। উনি দেশের সমস্ত বিদ্যালয় থেকে লাইব্রেরিয়ানের পদ বিলুপ্ত করে দিলেন। এখন বিদ্যালয়ে আর বই নাই। বিদ্যালয়ে বই নাই মানে কী? ছাত্রের কাছে বই নাই মানে কী? সারা জাতির কাছে বই নাই।’
আবু সায়ীদ বলেন, ‘ছেলে-মেয়েরা (বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী) যেন বই কাকে বলে তা চোখে দেখতে না পারে সেই জন্য বইগুলোকে সব ঢোকানো হলো কাঠের আলমারির মধ্যে। লোহা-কাঠের আলমারি এবং সামনে বাজারের সবচেয়ে ভয়াবহতম তালা এনে লাগানো হলো। বিদ্যালয়ের মধ্যে যে শিক্ষক সবচেয়ে ভয়াবহ দর্শন, যাকে দেখলে ছাত্ররা দৌড় দেয় তাঁকে লাইব্রেরিয়ানের ভারপ্রাপ্ত করা হলো। বই দেওয়া হবে না, কিন্তু বইগুলোকে তো রাখতে হবে।’
আবু সায়ীদ বলেন, ‘এরপর আস্তে আস্তে লাইব্রেরি শেষ হয়ে গেল। শিক্ষা আরও নিচের দিকে নামল। আমরা এরশাদ আমলের শেষদিকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র করার কথা চিন্তা করলাম যেহেতু একটা জাতি বইহীন হয়ে গেছে। এখন এই জাতির মধ্যে বই আনতে হবে। ব্রিটিশরা যে রকম আমাদের চা ধরিয়েছিল। আমরা তেমনি এই জাতিকে বই ধরাব। দেখা যাক, যেমন করে পারি বই আনব।’
বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবু সায়ীদ বলেন, “বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন না ৭ই মার্চের ভাষণে? ভাষণের সময় আমি ঠিক বঙ্গবন্ধুর থেকে ৩০ হাত দূরে ছিলাম। আমি ওই তেজ দেখেছি। মাইক্রোফোন শুনেও বোঝা যায় না। আর ভিডিওতেও বোঝা যায় না। উনি বলেছিলেন যে ‘যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।’ আমরা ঠিক করলাম যে যত দিক থেকে পারা যায় এই জাতির হাতে বই নিয়ে যেতে হবে আমাদের। কারণ বই হচ্ছে পরিশীলন। ”
এ সময় আবু সায়ীদ বাতিঘরের রাজশাহী শাখার উদ্বোধন ঘোষণা করেন। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চায় নতুন মাত্রা যোগ করতে শিক্ষা নগরী রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার পেছনে খানসামার চকে এই আউটলেট করা হলো। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কবি-সাহিত্যিকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল এটি। হাজির হয়েছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও।
অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ, বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ, রাজশাহী নগর পুলিশের কমিশনার আনিসুর রহমান, জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, কবিকুঞ্জের সভাপতি রুহুল আমিন প্রামাণিক প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন বাতিঘরের স্বত্বাধিকারী দীপঙ্কর দাস।