হোম > সারা দেশ > রাজশাহী

গ্রামজুড়ে পুলিশ-আতঙ্ক সৎকারেও কেউ নেই

রিমন রহমান, রাজশাহী

গ্রামে এক বৃদ্ধা মারা গেছেন। কিন্তু তাঁর সৎকারের জন্য কোনো লোক নেই। শেষে পুলিশ অভয় দিল, বৃদ্ধাকে সৎকারের দিন গ্রামে কোনো পুলিশ যাবে না। তাতেও সৎকারকাজের জন্য আসেনি কেউ। পরে অন্য গ্রামের লোকজন এসে মালঞ্চ রায় নামের ওই বৃদ্ধার মরদেহ সৎকার করে।

গতকাল রোববারের চিত্রটি এমনই ছিল রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রামপাড়া গ্রামের। পুলিশ-আতঙ্কে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে গ্রামটি পুরুষশূন্য। ভয়ে রাতে বাড়িতে কোনো নারীও থাকছেন না। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাঁওতাল অধ্যুষিত এই গ্রামে ৩৬টি পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে মাত্র ৪টি পরিবার মুসলিম।  

গ্রামের বাসিন্দা আনন্দ রায় চোলাই মদ তৈরি করে পান করেন। একবার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছিল। কিন্তু জামিন নেওয়ার পর আর আদালতে হাজিরা দেননি আনন্দ। তাই আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। গত শুক্রবার দুপুরের পর পুলিশ বাড়িতে গিয়ে তাঁকে ধরে ফেলে। তখন গ্রামবাসী পুলিশের ওপর হামলা করে তাঁকে ছিনিয়ে নেয়। থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুল ইসলাম ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাসুদুর রহমানকে মারধরের পর অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। গ্রেপ্তার করা হয় সাতজনকে। তবে আনন্দকে আর পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় পুলিশ মোট ১৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করে মামলা করে। মারধরের শিকার এসআই মনিরুল এ মামলার বাদী। পুলিশ এখন এ মামলায় ধরপাকড় চালাচ্ছে। শুধু রামপাড়া নয়, আশপাশের কয়েকটি গ্রামেও অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। তল্লাশির নামে বাড়িঘরে হামলা, আসবাব, হাঁড়ি-পাতিল ভাঙচুর, এমনকি একটি বাড়ির টিউবওয়েলের হাতল খুলে নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

এই ধরপাকড়ের মধ্যেই রামপাড়ায় শনিবার রাতে নিজ বাড়িতে মারা যান ৮০ বছরের বৃদ্ধা মালঞ্চ। গ্রামের লোকজন বলছেন, ওই রাতেও গ্রামে পুলিশ এসেছিল। মালঞ্চ রায় ছাড়াও আরও কয়েকজনের বাড়ি তছনছ করা হয়েছে। বাড়ির দরজা-জানালা ভাঙচুর করা হয়েছে। ভোররাতে মালঞ্চ মারা যান। তাঁর ছেলে সচীন রায় ও নাতি চয়ন রায় গত শুক্রবার থেকে পালিয়ে আছেন। মালঞ্চ মারা গেলেও তাঁরা আসেননি। খবর পেয়ে সেখানে যান জাতীয় আদিবাসী পরিষদের জেলার সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়। তিনিই পুলিশের সঙ্গে কথা বলে অভয় নেন। তাও গ্রামের কোনো পুরুষ ফিরে আসেননি। তাই অন্য গ্রামের লোকজন ডেকে মরদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়।

গতকাল দুপুরের পর পার্শ্ববর্তী দেবপুর গ্রামের পুরান পুষ্করিণী এলাকায় মালঞ্চ রায়ের সৎকার হয়। এ সময় ১০-১৫ জন পুরুষ মানুষকে দেখা গেছে। তাঁরা সবাই অন্য গ্রাম থেকে এসেছিলেন। সানাদিঘি গ্রামের সুরেশ রায়, দেবপুর গ্রামের সন্তোষ রায়, কামারপাড়া গ্রামের টুটন সিংহ, রাজারামপুর গ্রামের অজিত মুন্ডা, অভয়া গোপালপুর গ্রামের সুশীল কুমারসহ অন্যরা জানালেন, আদিবাসী নেতা বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়ের ডাকে তাঁরা এসেছেন।

সচীন রায়ের স্ত্রী শিখা রায় বলেন, শুক্রবার রাতে পুলিশ এসে তাঁদের ঘরের দরজা, বাথরুমের দরজা ও হাঁড়ি-পাতিল ভাঙচুর করে গেছে। তাঁর শাশুড়ি মারা গেলেও তাঁর স্বামী মাকে দাফন করার জন্য বাড়িতে আসতে পারেননি। তাঁর ছেলেও আসতে পারেনি। তাঁদের আত্মীয়স্বজন ও পাশের গ্রামের লোকজন এসে দুপুরের পর লাশ দাফন করতে নিয়ে যায়।

মাদক মামলার আসামি আনন্দ রায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে কেউ নেই। বাড়ির একটি দরজায় তালা, আরেকটি ভাঙা। পাশের বাড়ির বাসিন্দা নীলা বেওয়া (৬৫) জানালেন, ঘটনার সময় তাঁর ছেলেরা বাড়িতে ছিল না। তাও পুলিশ তাদের ধরতে আসে। না পেয়ে ঘরের জানালা-দরজা, চুলা, হাঁড়ি-পাতিল সব ভেঙে দিয়ে গেছে। বাড়ির বাইরের টিউবওয়েলের হাতলটাও খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নীলা বলেন, জমির ধান পেকে গেছে। এখন ধান কাটার মতোও বাড়িতে কেউ নেই। তিনি কী করবেন তা বুঝতে পারছেন না।

আদিবাসী পরিষদের নেতা বিমল চন্দ্র রাজোয়াড় বলেন, ‘পুলিশ আনন্দকে ধরতে এসেছিল সাদাপোশাকে। সে কারণেই গ্রামবাসী মনে করেছে অন্য কেউ আনন্দকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আর এ জন্যই সাদাপোশাকের পুলিশকে ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। দু-একজন গায়ে হাতও তুলেছিল। এটা ভুল-বোঝাবুঝি। তাও আমরা বলছি, যারা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, শুধু তাদেরই আইনের আওতায় আনা হোক। অন্য কাউকে যেন হয়রানি করা না হয়।’

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘অন্য কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। যাঁরা জড়িত ছিল, শুধু তাঁদেরই খোঁজা হচ্ছে। হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ সঠিক নয়।’ ওসি বলেন, ‘গ্রামের এক বৃদ্ধা মারা যাওয়ায় আদিবাসী নেতা আর আওয়ামী লীগের নেতাদের অনুরোধের কারণে আমরা বলেছি, আজ গ্রামে কোনো পুলিশ যাবে না। তাও যদি ভয়ে কেউ গ্রামে না আসে, তাহলে আমরা কী করতে পারি?’

রাবিতে পদত্যাগী ছয় ডিনের কাজের দায়িত্বে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যদ্বয়

রাবিতে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে: ডিনদের পদত্যাগ ইস্যুতে ছাত্রদল

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

নিরাপত্তা শঙ্কায় রাবি শিক্ষকের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

ওসমান হাদি ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন: তারেক রহমান

রাবির ৬ ডিনের পদত্যাগ দাবি: ভিসি, প্রো-ভিসির দপ্তরে তালার পর সভা, সিদ্ধান্ত রাতে

শিশু সাজিদের পরিবারকে অনুদান দিল জামায়াত

বগুড়ায় ট্রাকচাপায় কলেজছাত্র নিহত

দুই ধান ব্যবসায়ীর ১০ লাখ টাকা ও কৃষকের তিনটি গরু চুরি

রাবিতে ৬ ডিনের চেম্বারে তালা, দায়িত্ব ছাড়তে রাজি হয়েছেন বলে জানালেন জিএস আম্মার