রাজশাহীর সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পরিত্যক্ত বাড়িতে এক কলেজছাত্রকে আটকে রেখে ৩ তরুণ দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খবর পেয়ে পুলিশ নগরের উপশহরের এক পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে ফাহিম হোসেন জীম (১৭) নামের সেই ছাত্রকে উদ্ধার করে। এ সময় তিনজনকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়।
আটক তিনজন হলেন—জাহিদুল ইসলাম (২০), তাহাসান হোসেন আকাশ (২১) ও শাহাদাত হোসেন (২৭)। শাহাদাতের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায়। অন্য দুজনের গ্রামের বাড়ি নাটোর সদরে। তাঁরা রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। তিনি রাজশাহী নিউ গভট. ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
আটক শাহাদাত হোসেন মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আটকের সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি কোনো টাকা-পয়সা দাবি করিনি। আমি শুধু ওকে (জীমকে) বলেছি, তোমার বন্ধু ছাত্রলীগ করে তাঁকে এনে দাও। তারপর তুমি চলে যাও।’ অন্ধকারে পরিত্যক্ত বাসায় কেন আনা হয়েছিল—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যখন আসি তখন অন্ধকার ছিল না।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফাহিম হোসেন জীম বলেন, ‘আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার পদত্যাগ পর্যন্ত আমি আন্দোলনে ছিলাম। কিছুদিন ধরে আমাকে বারবার কল করা হচ্ছিল। বলা হচ্ছিল, আমি নাকি ছাত্রলীগ করি। আমি নগর ভবনের সামনে ছিলাম। সেখান থেকে আমাকে তুলে আনা হয়েছে। আনার পরে মারধর করে। বলে, আমার সঙ্গে নাকি ছাত্রলীগের যোগাযোগ আছি। তারা আমার কাছে চাঁদাও দাবি করেছিল। পরে আমি আমার দুজন বন্ধুকে ডাকলাম। আমার বন্ধুরা এসে লোকজন ডেকে আমাকে উদ্ধার করল।’
জীমকে উদ্ধারে গিয়েছিলেন মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহপ্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান কাফি। তাঁর বাড়ি উপশহরেই। কাফি বলেন, ‘আমরা খবর পাই যে, সাবেক মেয়রের পরিত্যক্ত বাড়ির গ্যারেজে এক ছাত্রকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। তার কাছে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে।’
কাফি বলেন, ‘আমরা গিয়ে দেখি, ওই ছাত্রকে গ্যারেজে অন্ধকারের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। আমি ওই তিনজনের পরিচয় জানতে চাই। তখন তাঁরা নিজেদের সমন্বয়ক পরিচয় দেয়। বলে, ওপরের নির্দেশ আছে এই ছেলেকে ধরার জন্য। তাঁর বন্ধু ছাত্রলীগ করে। একে ধরলে তাঁর বন্ধুকে পাওয়া যাবে। আমি তাদের কাছে ওপরের নির্দেশটিই দেখতে চাই। কিন্তু তাঁরা কোনো নির্দেশনা দেখাতে পারেনি। এরই মধ্যে পুলিশ চলে আসে। পুলিশ তাদের নিয়ে গেছে।’
কাফি আরও বলেন, ‘এরা যে ছেলেটিকে ধরে আনে সে ছাত্রলীগ না। মোবাইলে ছবি দেখলাম, সে নিজেই আন্দোলনে ছিল। ছেলেটির কাছে প্রথমে দেড় লাখ এবং পরে এক লাখ টাকা দাবি করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ওই তিনজন নিজেদের তাহাস নূর নামে একজনের লোক বলে পরিচয় দেয়। তাহাস ৫ আগস্টের পর শিক্ষার্থীদের নিয়ে নগর ভবন পাহারার দায়িত্বে ছিলেন।’
তাহাস নূর রাজশাহী কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি। ওই তিনজন আন্দোলনের সময় আমার সঙ্গে ছিল। আমরা একসঙ্গে নগর ভবন পাহারা দিয়েছি। তাঁরা আমাকে জানায় যে, তাঁরা একজন ছাত্রলীগকে ধরেছে। আমি তাঁকে পুলিশে দেওয়ার জন্য বলেছিলাম। পরে কী হয়েছে সেটা আমি বলতে পারব না।’
নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদি মাসুদ বলেন, ‘শুনলাম যে, সমন্বয়ক পরিচয়ে এক কলেজছাত্রকে সাবেক মেয়রের পরিত্যক্ত বাসায় আটকে রাখা হয়েছিল। পুলিশ গিয়ে ছেলেটিকে উদ্ধার করেছে। তিনজনকে থানায় আনা হয়েছে। ভুক্তভোগী ছেলেটি চাইলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। আমরা মামলা গ্রহণ করব।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জিকেএম মেশকাত চৌধুরী মিশু বলেন, ‘তাহাসের সঙ্গে আমার ৫ আগস্টের পর পরিচয়। সে শিক্ষার্থীদের নিয়ে নগর ভবন পাহারা দিত। তাঁর ছেলেরা কাউকে জিম্মি করেছিল, এমন কোনো খবর আমি পাইনি।’