রিমন রহমান, রাজশাহী
নতুন কোনো জাতের আম বাজারে এলে শুরুতে সাধারণত দাম কম থাকে। সরবরাহ যখন শেষ হতে চলে, তখন দাম বাড়তে থাকে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। রাজশাহীর বাজারে শুরু থেকেই ভালো মানের গোপালভোগ পাইকারিতেই বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা মণ দরে, যা মূলত আগে শেষ সময়ে এসে হতো। আর বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার গোপালভোগ আমের আকারও হয়েছে অনেকটা ছোট।
আমের দাম বেশি কেন জানতে চাইলে গত শুক্রবার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটের ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘গাছে তো এবার আমই নাই। হাটে আম আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপারীরা খই-মুড়ির মতো করে তুলে নিচ্ছেন। তাই দাম বেশি।’ শরিফুলের কাছে আম কিনতে এসেছিলেন পুঠিয়ার নামাজ গ্রামের বাসিন্দা মনজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার বাগানেই প্রতিবছর ৪০-৫০ মণ আম নামত। এবার একটা আমও নাই। আমাকেই কিনে খেতে হচ্ছে।’
বিভাগের আম উৎপাদনকারী তিন জেলার মধ্যে রাজশাহীতে সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে এই বানেশ্বরে। নওগাঁর সবচেয়ে বড় আমের বাজার সাপাহার। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সবচেয়ে বড় আমের মোকাম শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট। রাজশাহীতে জেলা প্রশাসনের ম্যাংগো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১৫ মে থেকে জাতভেদে আম নামানো শুরু হয়েছে। নওগাঁয় আম নামানো শুরু হয়েছে ২২ মে থেকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোনো ম্যাংগো ক্যালেন্ডার নেই। গাছে আম পাকলেই নামাতে পারবেন চাষিরা। কানসাট ও সাপাহারে এখনো আমের বাজার জমে ওঠেনি। এক সপ্তাহ ধরে জমেছে বানেশ্বর হাট। এখানে নানা জাতের গুটি আর গোপালভোগ বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার প্রথম দেখা গেছে হিমসাগরও।
সব আমেরই আকার আগের বছরগুলোর তুলনায় বেশ ছোট। কারণ জানতে চাইলে হাটে আসা চাষি ফারুক হোসেন বলেন, ‘পানি (বৃষ্টি) আছে ভাই? এবার তো পানিই হয়নি। পানি হলে আম বড় হয়। এবার এমনিতে গাছে আম নাই। পানির অভাবে বড়ও হয়নি।’
হাটের চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, গত ২২ মে থেকে বানেশ্বর হাটে আম উঠছে। নানা জাতের গুটি আম সর্বনিম্ন ৯৪০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে কিনছেন ব্যাপারীরা। আর শুরু থেকেই গোপালভোগ বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা মণ দরে। প্রতিবছরের মতো এবারও ৬ কেজি ঢলনসহ এক মণে ৪৬ কেজি আম দিতে হচ্ছে চাষিদের।
কাটাখালীর চৌমুহনী নওদাপাড়া থেকে হাটে প্রতিদিন এক ভ্যান আম বিক্রি করেন চাষি আবদুল লতিফ। তিনি বলেন, ‘আমের মুকুল আসার আগেই পরিচর্যায় প্রচুর খরচ করতে হয়েছে। তার পরও ভালো আম আসেনি, যা আসে সেগুলো টিকিয়ে রাখতে আরও বেশি পরিচর্যা করতে হয়। বিশেষ করে বৃষ্টি না হওয়ায় প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে গুটি টেকাতে শ্রমিক খরচ দিয়ে বাগানে সেচ দিতে হয়েছে। বাগানের ইজারার খরচ তো আছেই। সব মিলিয়ে এবার আমের উৎপাদনে খরচ বেশি, ফলন কম। তাই ভালো দাম না পেলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, এ জন্যই দাম বেশি।’
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোরে ৯৩ হাজার ২৬৬ হেক্টরে আমগাছে ফলন এসেছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে চাষিদের।
জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সাবিনা বেগম বলেন, এবার হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ২৮ টন। অন্য বছরের তুলনায় এবার গাছে আম কম হলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলন কম হলেও এবার ভালো দাম আছে। এই দাম পেলে চাষিদের লোকসান হওয়ার কথা নয়।