রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে বন্যার্তদের ভোগান্তির রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ভাঙনে আতঙ্কে রয়েছেন নদীর তীরবর্তী মানুষেরা। পানি বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও উপজেলার চৌমাদিয়া ও আতারপাড়া এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুই সপ্তাহ আগে ভাঙনের কবলে পড়ে বসতভিটা হারিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছে অর্ধশতাধিক পরিবার।
জানা গেছে, ভারী বৃষ্টি ও বন্যায় নদীবেষ্টিত উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি গ্রাম, হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্তত এক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। সড়কগুলোর কোথাও কোথাও জমে হাঁটুপানি। শুরু হয় নদীভাঙন। এতে দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। এখন নিম্নাঞ্চলের পানি নামতে শুরু করলেও কমেনি দুর্ভোগ।
সরেজমিন শুক্রবার (৪ অক্টোবর) পদ্মার চরে কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বন্যায় ডুবে যাওয়া রাস্তা থেকে পানি নামতে শুরু করলেও কাদা আর খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অধিকাংশ রাস্তাঘাট। চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কালীদাশখালি গ্রামের স্থানীয় মনিরুজ্জামান রনি, সাদ্দাম হোসেন, নাসিম, সুমনসহ কয়েকজন তরুণ প্লাস্টিকের বস্তায় মাটি ভরে রাস্তায় ফেলছেন। গবাদিপশুর খাদ্যসংকটে ভুগছেন কৃষকেরা। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা।
চৌমাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) সোহেল রানা জানান, পানিবন্দী ও ভাঙনের কবলিত কিছু লোকজন বিদ্যালয়ের কক্ষে অস্থাবর মালামাল রেখেছে। বিদ্যালয়ের চারদিকে পানি জমে থাকায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল রহমান জানান, আতারপাড়া ও চৌমাদিয়া গ্রাম নদীসংলগ্ন হওয়ায় ভাঙনের কবলে গৃহহীন হয়ে পড়েছে গ্রাম দুটির অর্ধশতাধিক পরিবার। এসব পরিবার নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যায় প্রায় ৩০০-৪০০ বিঘা জমির কালাই ও কলাবাগান নষ্ট হয়েছে।
একই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সহিদুল ইসলাম জানান, বৃষ্টি ও পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে বেশ কিছু রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তাঁর এলাকায় প্রায় ২০০ বিঘা জমির বেগুন ও সবজিখেত ডুবে গেছে।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, অব্যাহত বৃষ্টি ও বন্যায় কালীদাশখালি, মানিকের চর, পলাশিফতেপুর, নিচ পলাশি, উদপুর, লক্ষ্মীনগর, দিয়াড়কাদিরপুর, চৌমাদিয়া ও আতারপাড়াসহ ১০টি গ্রামের অন্তত এক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। তলিয়ে যায় আগাম চাষের সবজিখেত। পদ্মার পানিতে প্লাবিত হয় নিম্নাঞ্চল। ভেঙে পড়ে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ, বাজারসহ কয়েকটি বিদ্যালয়ের চারদিকে পানি জমে যায়। ভাঙনের কবলে পড়ে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন আতারপাড়ার হাবু মোল্লা, চৌমাদিয়ার আনজিরা বেওয়াসহ অর্ধশতাধিক পরিবার।
দিয়াড়কাদিরপুর গ্রামের সাবিরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে এলাকায় কোনো কাজ নেই। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান জানান, উপজেলায় সবজি চাষ হয়েছে ৪৮৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে চরে চাষ হয়েছে ৪৫ হেক্টর। তবে আকস্মিক বন্যা আর নিম্নচাপের কারণে নিচু এলাকায় আগাম চাষের সবজিখেত, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজখেত ও পেঁপেবাগান নষ্ট হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ১০০ পরিবারকে চাল দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। পরবর্তীকালে সরকারিভাবে বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যদের সহায়তা দেওয়া হবে।