‘বাড়ির পাশে কয়েক শতাংশ ফাঁকা জায়গা ছিল আমাদের। মাঠ থেকে ধান কেটে, মাড়াই শেষে খড়ের পলা দিতাম। বাঁশঝাড়ের ছায়ার নিচে গরু-ছাগল বেঁধে রাখতাম। গত বছর বন্যায় শ্বশুরবাড়ির এসব স্মৃতি নদীতে ভেসে গেছে। এবারও দুই-এক দিনের মধ্যে স্বামীর একমাত্র স্মৃতি বসতভিটাও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।’ আজ রোববার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে এসব কথা বলেন আত্রাই নদীর ভাঙনে ভুক্তভোগী মাজেদা বেগম।
মাজেদা বেগম নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার খেলনা ইউনিয়নের উদয়শ্রী বাজারীপাড়া এলাকার আবুল কাশেমের স্ত্রী। নদীর অব্যাহত ভাঙন থেকে মাত্র দেড় হাত দূরত্বে রয়েছে তাঁর বসতঘরের দেয়াল। এতে আতঙ্কে রয়েছেন মাজেদা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
স্থানীয়রা জানান, ব্লক দিয়ে দুই পাড় দ্রুত সংস্কার করা না হলে বাজারীপাড়ার পুরোটাই আত্রাই নদীতে মিশে যাবে। এতে বড় ধরনের জানমালের ক্ষতিসহ গরু-ছাগল নিয়ে ওই এলাকার সাধারণ মানুষকে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করতে হবে। এ কারণে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্রুত পাড় সংস্কারের দাবি জানান তাঁরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উদয়শ্রী বাজারীপাড়া এলাকায় কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা উজানের ঢলে আত্রাই নদীর পানি বেড়ে দুই পাড় ছুঁই ছুঁই করছে। এর সঙ্গে ভাঙতে শুরু করেছে নদীর দুই পাড়। নদীর তীর থেকে মাত্র দেড় হাত দূরে মাথা উঁচু করে কোনো রকমে দাঁড়িয়ে আছে ছয়টি পরিবারের বসতভিটা। এসব বাড়ির অধিকাংশ প্রাচীর ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
নদীভাঙনের আতঙ্কে ও অর্থসংকটের কারণে উদয়শ্রী বাজারীপাড়া এলাকায় মাটির বাড়িগুলোর অধিকাংশ ফেটে যাওয়া দেয়াল সংস্কার করতে পারেননি ভুক্তভোগীরা। অনেকে আবার টিনশেডের বেড়া দিয়ে ঘর তৈরি করে কোনো রকমে বসবাস করছেন। নদীতীরবর্তী এই গ্রামের ২৮ পরিবারের লোকজনের নির্ঘুম রাত কাটছে।
জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়জুর রহমান বলেন, ‘নদীর পাড় সংস্কার ব্যয়বহুল কাজ। অনেক অর্থের প্রয়োজন। নদীর পাড় ভাঙনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমা খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নদীর পাড় ভাঙনের বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া আমি নিজে সেখানে গিয়ে সরেজমিন তদন্তের মধ্য দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’