নওগাঁর ধামইরহাটে মালচিং পদ্ধতিতে বারোমাসি হাইব্রিড জাতের রঙিন তরমুজ চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন কৃষক আজিজার রহমান। দেশি তরমুজের চাইতে এ জাতের তরমুজ খেতে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এ কারণে হাটবাজারে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে এর চাহিদা বেড়েছে দ্বিগুণ। অল্প পরিশ্রমে ফলন বেশি ও ভালো দামে কেনাবেচা হওয়াতে এলাকার অন্য কৃষকেরাও হাইব্রিড তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে উমার ইউনিয়ন এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে উপজেলার সীমান্তবর্তী খয়ের বাড়ি গ্রামে স্বাস্থ্যসম্মত ও প্রাকৃতিক উপায়ে মালচিং পদ্ধতিতে সুগার কিং, ইয়েলো এবং ব্ল্যাক গোল্ড হাইব্রিড জাতের রঙিন তরমুজ চাষ করেছেন কৃষক আজিজার রহমান। তাঁর বাগানে মাচার নিচে হলুদ, সবুজ ও কালো রঙ্গে শোভা পাচ্ছে ২ থেকে ৫ কেজি ওজনের তরমুজ। বোঁটা থেকে মাটিতে ছিঁড়ে না পড়ে এ কারণে তরমুজগুলো নেটের জালি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা আসছেন আজিজারের বাগানে। এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন স্থানীয় কৃষক ও দর্শনার্থীরা।
আজিজার আরও জানান, তরমুজ চাষের আগে জমিতে গবোর, ডিএপি সার, পটাশ জিপসাম, পানি সেচ, বাঁশ, সুতা, বিষ ও লেবারসহ খরচ হয়েছে তাঁর ১৮ হাজার টাকা। প্রতিটি মাচায় দুই থেকে পাঁচ কেজি ওজনের তরমুজ ধরেছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৭০ টাকা। এতে সব খরচ বাদ দিয়ে ১ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ জাতীয় তরমুজ সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে গাছ থেকে তোলা হয়। কারণ এটাই তরমুজের প্রধান মৌসুম। বিশেষ করে মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ তরমুজ বেশি পাওয়া যায়। ‘বারোমাসি তরমুজ’ হওয়ায় এ জাতীয় তরমুজ চাষ করা লাভজনক। ছোট, লম্বাটে, ডিম্বাকার, কালো খোসা, ভেতরে টকটকে লাল শাঁসের তরমুজগুলো অসময়ে ওঠার কারণে বাজারে চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। দিন দিন অমৌসুমে তরমুজ চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ কারণে বাজারে চাষিরা ভালো দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রের জানা গেছে, হাইব্রিড তরমুজ চাষাবাদের আগে জমির চারপাশের আইল থেকে ৫০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার চওড়া করে লম্বা বেড তৈরি করতে হবে। এরপর আরও ৬০ সেন্টিমিটার চওড়া একটি বেড তৈরি করতে হবে। এভাবে পাশাপাশি দুটো জোড়া বেড তৈরি করতে হবে। যার মধ্যে ৬০ সেন্টিমিটার খালি থাকবে। এরপর জমিতে প্রয়োজনীয় সার ও গোবর দিয়ে মাটি ভালোভাবে আলগা করে নিতে হবে।
তারপর মাটির আইল (ডারা) তৈরি করে এর ওপর পলিথিনজাতীয় মালচিং কাগজ বিছিয়ে দেওয়ার পর এক হাত পরপর ছিদ্র করে বীজ রোপণ করে দুই ফুট লম্বা উচ্চতায় মাচা বা ঝাংলা তৈরি করতে হবে। এ জাতীয় মাচা তৈরিতে বাঁশ ও নাইলন জাতীয় সুতার প্রয়োজন হয়। গাছ বড় হতেই গাছের গোঁড়া থেকে নিচ বরাবর দেড় ফুট বাঁশের খুঁটি পুঁতে দিতে হবে। খুঁটির সাহায্যে গাছগুলো মাচার ওপর বিস্তার লাভ করে।প্রতি মাচায় গাছের ডালে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০টি তরমুজ ধরে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক আল জোবায়ের আজকের পত্রিকাকে বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মালচিং পদ্ধতিতে কালো তরমুজ চাষ প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে ১ জন কৃষককে জৈব সার, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বিতরণ করা হয়েছে। হাইব্রিড তরমুজের ফলন বেশি। এক বিঘায় এ জাতের তরমুজের ফলন হয় প্রায় ৬ থেকে ৮ টন। অসময়ে তরমুজের দাম বেশি পাওয়া যায়। এ কারণে কৃষক অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন।