রাজশাহীতে পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। এই ঘটনার পর থেকে তাঁর স্বামী গা ঢাকা দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে দুপুরের দিকে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে।
এর আগে বুধবার রাতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌর সদরের গোদাগাড়ী মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ওই গৃহবধূর নাম সুরভী খাতুন (২৮)। তিনি ওই গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসী তরিকুল ইসলামের মেয়ে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান পলাতক রয়েছেন।
পুলিশ বলছে, ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের মেডিকেল মোড় এলাকার শামসুদ্দীন ইসলাম ধলুর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় সুরভী খাতুনের। বিয়ের পর থেকেই স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান বেকার ছিলেন। এ নিয়ে প্রায় সময়ই এই দম্পতির মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষ ছিল।
গতকাল বুধবার বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) নিয়োগের এমসিকিউ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এই পরীক্ষায় সুরভী খাতুন উত্তীর্ণ হন। আর এই খবরে শ্বশুর বাড়ি যান মোস্তাফিজুর রহমান। কারণ স্ত্রী সুরভী খাতুন কিছুদিন থেকে তাঁর বাবার বাড়িতেই থাকছিলেন। তাঁর স্বামী মোস্তাফিজুর রহমানও একই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তিনি উত্তীর্ণ হতে পারেননি।
শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পর বুধবার রাতে এ নিয়ে দুজনের মধ্যে প্রচণ্ড ঝগড়া হয়। দীর্ঘদিন থেকে কর্মহীন থাকায় এ সময় মোস্তাফিজুরকে তাঁর শাশুড়ি বকাবকি করেন। পরে রাতে তারা সবাই ঘুমিয়ে পড়েন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সুরভীর মা তাদের ডাকতে যান। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরে ঢুকে দেখেন, মেয়ের নিথর দেহ বিছানায় পড়ে আছে। আর জামাতা মোস্তাফিজুর ঘরে নেই। তড়িঘড়ি করে তারা সুরভীকে গোদাগাড়ীর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুরভীকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) মর্গে পাঠায়।
এ বিষয়ে গোদাগাড়ী সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সোহেল রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় নিহত গৃহবধূর গলায় হালকা দাগ দেখা গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে—পারিবারিক কলহের জেরে তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনায় নিহতের মা জ্যোৎস্না আক্তার বাদী হয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।’
তবে আসামি পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।