বগুড়ার কাহালু উপজেলার আড়োলা, যোগীর ভবন ও আতাইলপাড়া গ্রামের তালপাতার তৈরি হাতপাখার খ্যাতি দেশজুড়ে। প্রতিবছর আশ্বিন মাস থেকে শুরু হয় এই তালপাখা তৈরির কাজ। চৈত্র থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত চলে বিক্রি। এবার গতবারের চেয়ে অন্তত কয়েক লাখ পাখা বেশি বিক্রির আশা করছেন কারিগরেরা।
বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নে পাশাপাশি এই তিন গ্রামের অবস্থান। গ্রামের নারী-পুরুষ, শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবাই অবসর সময়ে তালপাখা তৈরির কাজ করেন। বংশপরম্পরায় এই তিন গ্রামের মানুষ তালপতার পাখা বানিয়ে আসছে বলে জানান সেখানকার বাসিন্দারা। জলবায়ুর পরিবর্তন, ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে যত দিন যাচ্ছে, বাড়ছে পাখার চাহিদা। সেই সঙ্গে বাড়ছে পাখা তৈরির কাজের পরিধি।
আড়োলা গ্রামের আকরাম আকন্দ জানান, দাদার আমল থেকে তাঁরা তালের পাতা দিয়ে হাতপাখা তৈরির কাজ করে আসছেন। কৃষিকাজের পাশাপাশি এ কাজ করেন তিনি। তাঁর স্ত্রীও সংসারের কাজের ফাঁকে রঙিন নকশা করে তালপাখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ করেন।
তালগাছের পাতা (স্থানীয় ভাষায় তালের ডাগুর) দিয়ে তিন ধরনের পাখা তৈরি হয়। স্থানীয়ভাবে নাম দেওয়া হয়েছে পকেট পাখা, ঘুরানী পাখা এবং ডাগুর পাখা। পাখা বানাতে তালের পাতা ছাড়াও বাঁশ, সুতা এবং লোহার তার প্রয়োজন হয়। তারপর নানা রঙের ছোঁয়ায় দেখতে আকর্ষণীয় করে তোলা হয় হাতপাখাগুলো। ১০ টাকায় কেনা তালগাছের একটি পাতা বা ডাগুর দিয়ে তৈরি হয় দুটি বড় পাখা বা ডাগুর পাখা, চারটি ঘুরানী পাখা এবং ছয়টি পকেট পাখা।
যোগীর ভবন গ্রামের মামুনুর রশিদ বলেন, তিনি প্রতিবছর ১৭ থেকে ১৮ হাজার ডাগুর পাখা তৈরি করেন। এই পাখা বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়।
গত বছরের তুলনায় এ বছর পাখার চাহিদা বেশি বলে উল্লেখ করে মামুনুর রশিদ বলেন, একটি তালপাতা বা ডাগুরের দাম ১০ টাকা হলেও বাঁশ ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খরচও বেড়ে গেছে।
হাতপাখার তিন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, পকেট পাখা ১১ টাকা, ঘুরানী পাখা ২০ টাকা এবং ডাগুর পাখা ৩০ টাকা দরে ব্যাপারীরা পাইকারি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা আবার বিভিন্ন মেলা কিংবা হাট-বাজারে খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করছেন।
গরমের সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় হাতপাখার চাহিদা প্রতিবছরই বাড়ছে বলে জানান পাখা কিনতে আসা ব্যাপারী আজগর আলী। তিনি বলেন, শহর এবং গ্রামে তীব্র গরম থেকে একটু প্রশান্তি পেতে ধনী-দরিদ্র সব পরিবারেই হাতপাখার ব্যবহার যুগ যুগ ধরে।