দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আলোচিত প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। নৌকা প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। ভোটে বিশাল ব্যবধানে নৌকার প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়ে জামানত হারিয়েছেন। এরপর থেকে চুপ ছিলেন তিনি। তবে নির্বাচনের দুদিন পর গতকাল সোমবার রাতে ফেসবুক লাইভে এসে নিজের প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
নিজের ফেসবুক পেজে লাইভে এসে মাহি বলেন, ‘হেরে গেলেও ভেঙে পড়েনি। কম ভোট পেলেও আমি মেয়ে হয়ে ভোট করেছি, তা অ্যাপ্রিশিয়েট করা উচিত।’ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। গতকাল সোমবার রাত ১০টা ৩৭ মিনিটে ফেসবুক থেকে লাইভে এসে এসব কথা বলেন মাহি।
তিনি বলেন, ‘সবাই নিশ্চয় ভাবছেন আমার প্রচণ্ড মন খারাপ। কিছুটা তো মন খারাপ হবেই। কারণ আমি হেরে গেছি গেমে। নির্বাচন একটা গেম। মন খারাপ কিছুটা, কিন্তু সেরকম কিছু না। প্রতিটি সিচ্যুয়েশনেই আগে নেগেটিভ বিষয়টি মাথায় রাখি, নেগেটিভ হতেই পারে। প্রতিটি সিচ্যুয়েশনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম। ইশতেহারে বলা কথা নারীদের ঘর হবে একেকটা কর্মসংস্থান ও তরুণেরা হবেন উদ্যোক্তা। এসব ঠিক কতটা বড় পরিসরে করতে পারব, সেটা সরকারিভাবে যতটা সম্ভব তা ব্যক্তিগতভাবে একটু চ্যালেঞ্জিং। এরপরও ব্যক্তিগত উদ্যোগে যথেষ্ট চেষ্টা করব।’
তাঁর বক্তব্যে মাহি বলেন, ‘এই তানোর-গোদাগাড়ীর রাস্তা-ঘাটের যে বেহাল অবস্থা, সারা দেশের রাস্তা যে উন্নত সেখানে আমার তানোর-গোদাগাড়ীতে এখনো গরুর গাড়ি চলার মতো অবস্থা। বৃষ্টি ও বর্ষার সময় হাঁটু কাঁদা হয়ে যায়। সেই রাস্তাঘাট এবং বরেন্দ্রভূমির যে পানির সমস্যা, এই দুটো বিষয়ে দৃষ্টি দেবেন। যিনি নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্য হয়েছেন, গত ১৫ বছরে যেসব উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি, সেসব এই পাঁচ বছরে যেন তিনি করেন।’
এ সময় আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী এবং নির্বাচিত প্রার্থীর সমালোচনা করেন অভিনেত্রী। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে তাঁর যে জনপ্রিয়তা কমে এসেছিল, তা যেন এই পাঁচ বছরে কাটিয়ে ওঠেন তিনি। আমি কিন্তু মাঠে আছি। তা না হলে আগামী পাঁচ বছর পর ফের নির্বাচনী মাঠে দেখা হবে। তার তো জনপ্রিয়তা শূন্য। যতটা ভোট পেয়েছেন সেটা নৌকার জন্য। তো আপনাদের এত খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
মাহি আরও বলেন, ‘পাঁচ বছরে আপনারা (নির্বাচিত প্রার্থী) এমন এমন কাজ করবেন, যাতে মানুষের হৃদয়ে আপনাদের জায়গা হয়। যিনি নতুন সংসদ সদস্য হয়েছেন তার প্রতি আমার পরামর্শ, আপনারা মানুষের উপকারের জন্য যে সুপ্রিম পাওয়ার পেয়েছেন পাঁচ বছরের জন্য, সেটা কাজে লাগাবেন।’
উল্লেখ্য, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী এক লাখ ৩ হাজার ৫৯২ ভোট পেয়ে আবারও বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী কাঁচি প্রতীকে পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪১৯ ভোট।
আর নায়িকা মাহি পেয়েছেন ৯ হাজার ৯ ভোট। ১৭টি আসনে কোনো ভোটই পাননি মাহি। ফলে নির্বাচন কমিশনের শর্ত মোতাবেক ভোট না পাওয়ায় জামানতও হারালেন তিনি। গত রোববার ভোট গ্রহণ শেষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।