সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি
অজানা কারণে বংশপরম্পরায় অন্ধত্ব নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার একই বংশের ১৯ জন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রায় ২০০ বছর ধরে এমন জন্মান্ধের চক্রে রয়েছে এই বংশের লোকজন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে এমন ঘটনার শিকার হয়ে আসছে পরিবারটি।
একই বংশে জন্ম নেওয়া জন্মান্ধ ১৯ জন হলেন—মৃত তমির উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে আসাদজামান (৮০), ইদ্রিস আলী (৫৫), ইউনুস আলী (৪৮), মৃত তমির উদ্দিন মণ্ডলের মেয়ে এজেদা বেওয়া (৬০), মৃত মহির উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে নুরুল ইসলাম (৭০), আসাদজামানের ছেলে মোশারফ মণ্ডল (৪০), মিটুল (৩৪), আসাদজামানের মেয়ে মোর্শেদা (৩৬), ইদ্রিস আলীর মেয়ে আশিনুর বেগম (২৫), আশিনুর বেগমের ছেলে আজিজুর (১৬), ইউনুস আলীর মেয়ে সাবিনা বেগম (২৫), ফাতেমা (১০), সাবিনা বেগমের মেয়ে সুলতানা (৩), মৃত মুংলু মণ্ডলের ছেলে সাহেব আলী (৩৫), সাহেব আলীর মেয়ে শারমিন (১৩), সাহেব আলীর ছেলে শহীদ (১০), নুরুল ইসলামের ছেলে শরিফুল ইসলাম (৩০), মিটুলের মেয়ে মিতু খাতুন (১৩) ও মিটুলের ছেলে ইনসান।
জানা গেছে, জন্মান্ধ এসব হতভাগ্য মানুষ ছোট ঘরে কষ্ট করে থাকে। ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া আর কোনো আয়ের সুযোগ না থাকায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
জন্মান্ধ বংশের জন্মান্ধ লোকজন জানিয়েছেন, তাঁরা প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া আর কোনো সরকারি সহায়তা পান না।
জন্মান্ধদের বিষয়ে বালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক রুহুল আমিন বলেন, ‘জন্মান্ধদের জন্য আমি প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তাদের মধ্যে একজনের সরকারিভাবে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে, একজনকে ছাগল ও অপর একজনকে ঢেউটিন প্রদান করা হয়েছে। আমার ইচ্ছা আছে সমবায় সমিতির মাধ্যমে এদের পুনর্বাসনের।’
জন্মান্ধদের জীবনমান নিয়ে সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘সরকার সারা দেশেই প্রতিবন্ধীসহ অসহায় মানুষের কল্যাণে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাঁরা জীবনমান উন্নয়নে আগ্রহী হলে এবং ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়তে চাইলে তাদের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
সোনাতলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. মিনহাদুজ্জামান লীটন বলেন, ‘এরই মধ্যে একই বংশের জন্মান্ধদের কল্যাণে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়িয়ে সম্মানজনক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসিত করা যেতে পারে। তাঁদের জন্য আমাদের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।’
জন্মান্ধ মানুষগুলো ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করুক। তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসুক সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। অন্ধকারেও তারা দেখুক কল্পিত আলো এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।