নাটোর পৌরসভা চত্বরে পৌর কাউন্সিলর ও ঠিকাদের মধ্যে বিলের পাওনা টাকা নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে নাটোর পৌরসভার ভেতর এ ঘটনা ঘটে।
পৌরসভার একটি কাজের ঠিকাদার ছিলেন ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিরো ও হাসু। ঠিকাদারি বিলের পাওনা টাকা আদায় নিয়ে তাঁদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল।
নিহত শিহাব হোসেন শিশির (২৩) শহরের পিটিআই এলাকার মোজাহার আলীর ছেলে। তিনি কাউন্সিলর হিরোর অনুসারী। ঘটনার পর হিরো ও হাসুকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
এদিকে ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম। শিশিরের বাবা মোজাহার আলী ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৯৮ লাখ টাকার পৌরসভার একটি কাজের ঠিকাদার ছিলেন কাউন্সিলর হিরো ও হাসু। কাজটি শেষ হওয়ার পর সমুদয় টাকার বিল তুলে নেন হিরো। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হাসু পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরির কাছে অভিযোগ দেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে মেয়র তাঁর কক্ষে সালিসের জন্য দুজনকে ডেকে নেন। তাঁরা সালিস চলাকালেই বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে মেয়র হাসুর প্রাপ্য টাকা দিতে হিরোকে নির্দেশ দিলে হিরো সালিস ছেড়ে বেরিয়ে যান। এ সময় হাসু তাঁকে অনুসরণ করলে কার্যালয়ের নিচে দুজনের অনুসারীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে পরস্পরের ওপর আক্রমণ করেন। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শিশির রক্তাক্ত হন। তাঁকে উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান শিশির।
আহত হাসানুর রহমান হাসু বলেন, ‘পৌর মেয়র আমাদের দুজনকে নিয়ে আজ বসতে চেয়েছিলেন। তিনি আমাদের নিয়ে বসে আমাকে ৪ লাখ টাকা দিতে হিরোকে নির্দেশ দেন। কিন্তু হিরো তা না মেনে কার্যালয় থেকে বের হয়ে আসেন। নিচে থাকা তাঁর ১৫-২০ জন ছেলেপেলে আমাদের ওপর আঘাত করে। আমার বাম হাতের আঙুল কেটে দিয়েছে। আমি জীবন নিয়ে পালিয়ে এসেছি। তারপর শুনি একজন নিহত হয়েছে।’
নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার শরীফ আলী বলেন, মৃত অবস্থায় শিশিরকে আনা হয়। তাঁর গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হওয়ায় হয়ত তাঁর দ্রুত মৃত্যু হয়েছে। আহত হাসুর বাম হাতে আঘাত রয়েছে।
নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরি বলেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি কাউন্সিলর হওয়ায় আমি প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য দুজনকে ডেকেছিলাম। তবে কিছু বুঝতে না দিয়েই তারা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়ায়। পৌরসভার ভেতরে কোনো দিন এ রকম ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।’
নাটোর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) তারিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় এরই মধ্যে দুজনকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।