বগুড়ার তাঁতবস্ত্র ও কুটিরশিল্প মেলা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মেলা বন্ধ করার। শুক্রবার রাত সাড়ে দশটার দিকে মেলায় অভিযান পরিচালনা করে মেলা বন্ধের নির্দেশ দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল নাইম।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) মেলা বন্ধের নোটিশ পাঠায় জেলা প্রশাসন। এরপরও মেলা বন্ধ না হওয়ায় শুক্রবার ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেন।
তবে শুক্রবার সারা দিন লটারি বিক্রি হয়েছে। যথারীতি ড্র হওয়ার কথা রাতে। এরই মধ্যে মেলা বন্ধ করতে রাত সাড়ে ১০টায় সরেজমিনে মেলায় উপস্থিত হন ম্যাজিস্ট্রেট।
মনিপুরী জামদানি, বেনারসি তাঁতি কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবং বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন, বগুড়া কালেক্টরেট সমবায় সমিতি লিমিটেড ও বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী পরিষদ জেলা প্রশাসক কার্যালয় বগুড়া আয়োজনে গত ২৩ মে শহরের মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের মাঠে শুরু হয় মাসব্যাপী এ তাঁতবস্ত্র ও কুটিরশিল্প মেলা।
মেলায় প্রবেশমূল্যের ওপর লটারিই ছিল মূল আকর্ষণ। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন রাস্তার মোড়, বাসস্ট্যান্ড এবং উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে চলতো মাইকিং করে লটারি বিক্রি। আকর্ষণীয় পুরস্কারের প্রলোভনে লটারির টিকিট কেটে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে জেলার খেটে খাওয়া মানুষ এবং শিক্ষার্থীরা। আর লটারি বিক্রি করে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ (প্রায় অর্ধকোটি) টাকা হাতিয়ে নেয় মেলা কর্তৃপক্ষ।
নাগরিক সমালোচনা এবং পত্রপত্রিকায় লেখালেখির ফলে মেলা চালু রেখে ১৩ জুন সারা দিন টিকিট বিক্রি শেষে রাতে লটারির ড্র এর সময় লটারি বন্ধের ঘোষণা দেয় মেলা কর্তৃপক্ষ। পাঁচ দিন লটারি বন্ধ থাকার পর থেকে ১৮ জুন থেকে পুনরায় লটারি চালু করা হয়।
এদিকে ২৩ জুন মেলার নির্ধারিত ১ মাস শেষ হলেও বন্ধ হয়নি বগুড়ার তাঁতবস্ত্র ও কুটিরশিল্প মেলা। বন্ধ হয়নি লটারি বিক্রিও। অবশেষে শুক্রবার ৩১ তম রাতে এসে ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযানে মেলা গুটিয়ে নিয়েছে মেলার ব্যবস্থাপক এবং আয়োজক সংগঠনগুলো। তবে এবারও সারা দিন লটারি বিক্রির পর ড্র এর আগ মুহূর্তেই প্রশাসনের অভিযানে বন্ধ হলো মেলা। টিকিটের টাকা হাতে পেলেও ড্র এর পুরস্কার দিতে হলো না মেলা কর্তৃপক্ষকে।
ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল নাইম বলেন, ‘মেলার নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ায় কর্তৃপক্ষকে মেলা বন্ধের নোটিশ দেওয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার। এরপরও মেলা বন্ধ না হওয়ায় অভিযান পরিচালনা করে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি বন্ধ না হয় তাহলে ফের অভিযান চালানো হবে।’
মেলার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা মনিপুরী জামদানি, বেনারসি তাঁতি কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের মেলা বন্ধের নোটিশটি আমরা আজ হাতে পেয়েছি। কয়েক দিন বৃষ্টিতে আমরা কিছুটা ঘাটতিতে পড়েছিলাম। তাই অতিরিক্ত ৭ দিন মেলা চালু রাখার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু জেলা প্রশাসন সেটা মঞ্জুর না করে আজ রাতে মেলা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আমরা মেলা বন্ধ করছি।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর বগুড়া জেলা সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম তুহিন বলেন, ‘মেলার নামে লটারির এই খেলা বন্ধ করতে শুরু থেকেই প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছি। দেরিতে হলেও প্রশাসন মেলা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বলে আমি অভিবাদন জানাচ্ছি। তবে আজ সকালেই যদি মেলা বন্ধ করা হতো তাহলে আর হাজার হাজার মানুষের টিকিট কাটা টাকা হাতিয়ে নিতে পারত না মেলা কর্তৃপক্ষ।’