সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত বছরের ৪ আগস্ট নিহত হন শাহিন শেখ (১৬)। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা শাহিন শেখকে ছাত্রলীগ কর্মী দাবি করে ফেসবুকে প্রচারণা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহত শাহিনের পিতা বাবু শেখ। আজ বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ অভিযোগ করেন। এ সময় তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
নিহত শাহিন শেখের পিতা বাবু শেখ জানান, শাহিন শেখ ২০২৪ সালে সিরাজগঞ্জের ভিক্টোরিয়া স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা শাহিন শেখকে ছাত্রলীগ কর্মী দাবি করে ফেসবুকে প্রচারণা চালান।
তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সকালে ভাত খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয় শাহিন। যাওয়ার সময় বলে যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যাচ্ছে। ওই দিন দুপুর ১২টার দিকে শহরের চৌরাস্তা মোড় এলাকায় মিছিলে শাহিনকে দেখতে পাওয়া যায়। এরপর শাহিন বাড়ি ফেরেনি। সন্ধ্যা পর্যন্ত সে বাড়ি ফিরে না আসায় খোঁজাখুঁজি শুরু করি। কোথাও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। এমতাবস্থায় লোকমুখে শুনতে পারি আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলা করেছে। ধাওয়া খেয়ে শাহিন আত্মরক্ষায় শহরের মুজিব সড়কে সিরাজগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর বাড়িতে আটকে থাকতে পারে।’
তিনি জানান, ‘পরে ৪ আগস্ট রাতে আমরা জান্নাত আরা হেনরীর বাড়িতে যাই। তখন বাড়িতে কেউ ছিলে না। আমরা ঘরের বিভিন্ন কক্ষে শাহিনকে খোঁজাখুঁজি করি। আগুনে পোড়া ঘরের একটি কক্ষে দুটি লাশ পড়ে থাকতে দেখি। তার একটি লাশ আমার ছেলে শাহিনের ছিল। কিন্তু পুলিশ না থাকায় লাশে হাত দিইনি। পরের দিন ৫ আগস্ট সকালে আবারও জান্নাত আরা হেনরীর বাড়িতে আসি। এসে দেখি লাশ নাই। পরে জানতে পারি শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে লাশ রাখা হয়েছে। লাশের শরীরের অধিকাংশ স্থান পুড়ে গেছে। গলা কাটা ছিল। চেনার উপায় ছিল না না। কিন্তু আমার ছেলের পরনের জুতা ও শরীরের উচ্চতা দেখে বুঝতে পারি এটি শাহিনের লাশ। আমরা লাশ বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে আরও একজন লাশের দাবি করে। পরে পুলিশ কাউকে লাশ দেয়নি।’
বাবু শেখ বলেন, ‘ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে ৬ আগস্ট সিরাজগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করি (জিডি নম্বর ২৪৭/২৪)। পুলিশ গত সেপ্টেম্বর মাসে শাহিনের লাশের সঙ্গে আমার ডিএনএ পরীক্ষা করায়। ২০২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তারিখে ডিএনএ রিপোর্ট আদালতে দাখিল করে পুলিশ। ডিএনএ রিপোর্টে প্রমাণিত হয় শাহিন আমার ছেলে। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি শাহিনের লাশ আমার হেফাজতে নেওয়ার জন্য সদর আমলি আদালতে আবেদন করি। পরে আদালত শাহিনের লাশ আমার হেফাজতে দিতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়। গত শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) আমার ছেলের লাশ দাফন করি।’
বাবু শেখ আরও বলেন, ‘আমার ছেলে শাহিন শেখ কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য বা কর্মী ছিল না। সে একজন সাধারণ ছাত্র। ছাত্র হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে শহীদ হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আমার ছেলেকে ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। আমার ছেলেকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমার ছেলে সাধারণ ছাত্র। কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী বা সমর্থক না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি মামলা দায়ের করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। সরকারের কাছে আমি ন্যায়বিচার চাই।’