বগুড়া প্রতিনিধি
বগুড়ায় আবাসিক হোটেলে স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার সেনাসদস্য আজিজুল হক হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে পারিবারিক এবং দাম্পত্য কলহের কারণেই তিনি স্ত্রীকে হত্যা করেন বলে পুলিশকে জানালেও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে কী উল্লেখ করেছেন, তা জানা যায়নি।
আজ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত বগুড়ার জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সোমাইয়া জাহান ১৬৪ ধারায় সেনাসদস্য আজিজুল হকের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এর আগে আজিজুল হককে দুই ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম।
এদিকে আজ দুপুর পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল পুলিশ ও সেনাসদস্য আজিজুল হকের উপস্থিতিতে করতোয়া নদীতে তল্লাশি করে শিশু আব্দুল্লাহ আল রাফির দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন মাথা উদ্ধার করতে না পেরে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে। এর আগে গতকাল রোববার রাতে আজিজুল হকের শ্বশুর আসাদুল ইসলাম বাদী হয়ে শাজাহানপুর থানায় মামলা করেন। মামলায় জামাই আজিজুল হক ও তাঁর বাবা হামিদুল হককে আসামি করা হয়। সেই মামলায় পুলিশ আজিজুল হককে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তাঁর বাবাকেও গ্রেপ্তার করে।
পুলিশের একাধিক সূত্রমতে, সেনাসদস্য আজিজুল পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা করেন। মামলায় আজিজুল হকের বাবাকে হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া পারিবারিক বিরোধ এবং দাম্পত্য কলহের কারণে স্ত্রী আশামণি ও তাঁর ১১ মাস বয়সী ছেলে আব্দুল্লাহ আল রাফিকে হত্যা করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়।
মামলায় যৌতুক নিয়ে বিরোধের কথা উল্লেখ না থাকলেও বাদী জানায়, বিয়ের সময় শ্বশুরবাড়ি শহরের নারুলী এলাকায় বাড়ি করার জন্য জামাইকে ৩ শতাংশ জমি কিনে দিতে চেয়েছিলেন আসাদুল ইসলাম।
আসাদুল ইসলাম বলেন, পরবর্তী সময়ে জামাই আজিজুল জমির পরিবর্তে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। তাঁর মধ্যে দুই লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি তিন লাখ টাকার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল।
এ বিষয়ে শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুল হক পুলিশকে জানান, কর্মস্থলে চলে যাওয়ার আগে এক রাত বাইরে থাকার কথা বলে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে হোটেলে ওঠেন। শনিবার রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে স্ত্রী-সন্তানকে গলা কেটে হত্যা করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘১১ মাস বয়সী সন্তানের মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে পলিথিনে মুড়িয়ে একটি ব্যাগে ভরে বগুড়া শহরে আসেন। এরপর শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে চেলোপাড়া রেলব্রিজের নিচে করতোয়া নদীতে কচুরিপানার মধ্যে ফেলে দিয়ে নারুলীতে শ্বশুরবাড়ি যান।’
ওসি বলেন, ‘আজিজুলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রোববার এবং আজ (সোমবার) দুপুর পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল নদীতে তল্লাশি করেও ফেলে দেওয়া মাথা উদ্ধার করতে পারেনি।’