ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়দেশ্বরী গ্রামের বাসিন্দা রমিসা বেগম (৫৫)। অসুস্থ স্বামী দুই ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে অভাব-অনটনে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে তাঁর। কয়েক বছর নানান কাজ করলেও অবশেষে শীতের পিঠা বিক্রি শুরু করেন। প্রায় ৩ বছর ধরে শীতের পিঠা বিক্রি করে চলছে তাঁর সংসার।
শুধু রমিসা বেগম নয়, শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড, টার্মিনালের সামনে, আর্ট গ্যালারি মোড়, পোস্ট অফিসের সামনে, জজকোর্ট চত্বর, কলেজ মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে তাঁর মতো অর্ধশত নারীর সংসার চলছে শীতের পিঠা বিক্রি করে। এমনকি গ্রাম-গঞ্জেও ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান রয়েছে আনাচে-কানাচে। সন্ধ্যা হলে প্রতিটি দোকানেই পড়ে পিঠা বিক্রির ধুম। এসব দোকানে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার পিঠা বিক্রি হচ্ছে।
দোকানি রমিসা বেগম বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ৩০-৩৫ কেজি চালের পিঠা বিক্রি হয়। এতে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা লাভ হয়।
শহরে বাসস্ট্যান্ড এলাকার আফসার আলী বলেন, ‘এ বছর চাল-ডাল, গুড়, মসলার দাম বাড়লেও আমরা গত বছরের দামেই পিঠা বিক্রি করছি। এতে আমাদের অন্যান্য বছরের তুলনায় লাভ একটু কম হচ্ছে।’
সদর উপজেলা বড় খোচাবাড়ী বাজারে পিঠা বিক্রেতা আয়েশা বেগম বলেন, ‘আমরা কয়েকজন ফুটপাতে বসে গভীর রাত পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করি। আর অন্য সময় অন্য কাজ করি। এই পিঠা বিক্রির আয়ে চলে সংসার।’
চিতই পিঠা খেতে আসা সাকেরুল আলম বলেন, ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। গতকাল সন্ধ্যায় হঠাৎ করে বাসায় কয়েকজন মেহমান এসেছিল। তাঁদের এখান থেকে পিঠা নিয়ে আপ্যায়ন করলাম। তাঁরা এই পিঠা খেয়ে খুব খুশি হয়েছে।’
জামিরুল ইসলাম নামের একজন বলেন, ‘মাত্র ১০ টাকায় নারকেল, গুড় দিয়ে সুস্বাদু ভাপা পিঠা পাওয়া যায়। ভালো লাগে, তাই নিয়মিত খাই।’
ঠাকুরগাঁওয়ের সংস্কৃতি ব্যক্তি ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মনোতোষ কুমার দে বলেন, বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি উৎসব শীতকালীন পিঠা উৎসব। বাঙালির লোকজ ইতিহাস-ঐতিহ্যে পিঠা-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে প্রাচীনকাল থেকেই। তাই এ পিঠা উৎসব আমাদের প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে।