রংপুর প্রতিনিধি
অন্যের জমিতে খড়ের ছাউনি ও বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা ভাঙাচোরা ঘরে দুই মেয়েকে নিয়ে এক যুগ ধরে থাকতেন রংপুরের তারাগঞ্জের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কান্দুরী। এবাড়ি-ওবাড়ি থেকে ভিক্ষা করে চলত তাঁর সংসার। কয়েক দিন আগে উপজেলার কুর্শা জদ্দিপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন তিনি। এরপর জীবিকা নির্বাহের জন্য পেলেন ছাগল।
উপজেলা পরিষদ চত্বরে এক হাতে ছাগলের দড়ি ধরে, অন্য হাতে শাড়ির আঁচলে চোখের পানি মুছতে মুছতে কান্দুরী বেগম বলেন, ‘বাবা, মোর স্বামী মরি গেইছে, সংসারোত কোনো ছেলে নাই। দুকনা বেটি। ভাঙা ঘরোত কষ্টে আছনু। দ্যাওয়ার পানিত ঘুমার পাও নাই। মোক ডাকে নিয়া নয়া রঙিন পাকা ঘর দিছে। ফের ছাগল দেইল। ছাগল কোনা পুষি মোর সুখে দিন যাইবে, অভাব থাকবে না।’
শুধু কান্দুরী বেগম নন; তাঁর মতো আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করা ৩৭ জন নারীকে গতকাল রোববার একটি করে ছাগল দেওয়া হয়েছে।
ঘরের পর জীবিকার রসদ পেয়ে চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক থাকা উপজেলার উজিয়াল আশ্রয়ণের বাসিন্দা আরজিনা বেগম বলেন, ‘আগোত ঘর আছলো না, ঘর পাছি। এ্যালা পাইনো ছাগল। ছাগল কোনা পুষি সংসার চালামো। যায় ছাগল দেইল, তাঁর জন্যে আল্লাহর কাছোত দোয়া করমো।’
খলেয়া নন্দরাম আশ্রয়ণের বাসিন্দা অঞ্জনা রানী বলেন, ‘নয়া ঘরোত শান্তিতে ঘুমাই, কিন্তু কাজ কামের অভাব। আগোত রান্না করি বসি আছনু, এ্যালা ছাগল কোনা পানু তাক পুষিম। সারা দিন ঘাস খিলাইম, বাচ্চা হইবে বেচাইম, লাভবান হইম।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণের দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের অধীনে তারাগঞ্জের কুর্শা জদ্দিপাড়া, উজিয়াল, খলেয়া নন্দরাম আশ্রয়ণে ৯০টি ঘর, বারান্দা, রান্নাঘর, নলকূপ ও শৌচাগার নির্মাণ করে উপকারভোগীদের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণ করতে ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। এই তিন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩৭ জন বাসিন্দাকে এডিপির অর্থায়নে ১ লাখ ৭৯ হাজার টাকায় ছাগল কিনে দেওয়া হয়।
কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আফজালুল হক ও হাঁড়িয়ারকুঠির ইউপি চেয়ারম্যান কুমারেশ রায় বলেন, ‘আশ্রয়ণ তিনটিতে আশ্রয় পাওয়া সবাই ভূমিহীন, দিনমজুর, ভিক্ষুক। তাঁদের ঘর করার সামর্থ্য ছিল না। ঘর পেয়ে দরিদ্র মানুষেরা খুব খুশি। এতে সরকার, ইউএনওর পাশাপাশি আমরাও প্রশংসিত হচ্ছি।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান লিটন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যতিক্রমী উদ্যোগের ফলে তারাগঞ্জে আশ্রয়হীন ৫০৫ পরিবার আশ্রয় পেয়েছে। তারা পাকা ঘরসহ জমির মালিক হয়েছে। আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের স্বাবলম্বী করার জন্য উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে ৩৭ জনকে একটি করে ছাগল দেওয়া হয়েছে। আশা করছি একটি ছাগল দিয়ে একটি করে খামার গড়ে তুলবে তারা।’
জানতে চাইলে ইউএনও রুবেল রানা বলেন, ‘জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসানের নির্দেশনা ও পরামর্শে আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের স্বাবলম্বী করার কাজটি করতে সাহস জুগিয়েছে। তারাগঞ্জে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়া পরিবারের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কাজ করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ৩৭ জনকে ছাগল দেওয়া হয়েছে।’ পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য প্রতিটি পরিবারে পারিবারিক পুষ্টিবাগান করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।