পঞ্চগড়ে আহমদিয়া জামাতের ‘সালানা জলসা’ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটনার পর থেকে শহরজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আজ শনিবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও যান চলাচলসহ লোকজনের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া শহরে বেরোচ্ছেন না কেউ।
এদিকে কঠোর টহলে রয়েছে পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তবে সাধারণ জনগণের উপস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে, সেই শঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ী ও রিকশাচালকেরা।
আজ বেলা একটা পর্যন্ত চৌরঙ্গীর মোড়, ধাক্কামারার মোড়, গোল চত্বরসহ শহরের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন দেখা গেছে, শহরে মানুষের আনাগোনা কমে যাওয়ায় ক্রেতা ও যাত্রীসংকটে অলস সময় পার করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ রিকশা ও ইজিবাইকের চালকেরা।
রাজনগরের সাইদুল ইসলামের পাঁচ সদস্যদের সংসার চলে তাঁর রিকশার প্যাডেলের আয়ে। কিন্তু সকাল নয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত আজ তাঁর আয় হয়েছে মাত্র ২০ টাকা। অন্যদিন এ সময়ে ১০০ টাকা পর্যন্ত আয় হতো।
দৈনিক ৪০০-৫০০ টাকা আয় করেও ছয় সদস্যদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় অটোরিকশাচালক আব্দুস সোবাহানকে (৩০)। পঞ্চগড় বাজার এলাকায় তাঁর বাড়ি।
পঞ্চগড় চৌরঙ্গীর মোড়ে কথা হলে আব্দুস সোবাহান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একদিনের কামাই দিয়া দুবেলার ভাত জোটে না। তার ওপর শহরোত মারামারি। যাত্রী নাই, সারা দিনে দেড় শ টাকা কামাই হবার নেয়। জানি না আরও কদ্দিন এইংকা চলবে। হামরা চাই এইংকা গণ্ডগোল যেন শহর আর না হয়। হামার পেট যেন দুঃখ না পায়।’
ওই মোড়েই কথা হয় হাড়িভাষা এলাকার রাজু মিয়া (৪০) বলেন, ‘ভাই কাইল যে অবস্থা দেখছি, তাতে বাড়ি থাকি বের হবার মন চায় না। কতক্ষণ জানি ফির গণ্ডগোল নাগে। কাইলকার গণ্ডগোলোত রাস্তা দিয়া হাঁটা মানুষ মারা গেইছে। ওষুধ নাগে জন্যে বাজারত আসনু।’
উল্লেখ্য, পঞ্চগড়ের আহমদিয়া জামাতের ‘সালানা জলসা’ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে আরিফুর রহমান (২৮) ও জাহিদ হাসান (২৩) নামের দুই তরুণ নিহত হয়। সংঘর্ষে পুলিশের ৯ সদস্য ও ২ সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
নিহত আরিফুর রহমান পঞ্চগড় পৌরসভার মসজিদপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি শহরের একটি ছাপাখানার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জুমার নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার সময় তিনি সংঘর্ষের মধ্যে পড়লে তাঁর মাথায় গুলি লাগে। স্থানীয় লোকজন আরিফুরকে উদ্ধার করে প্রথমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
অপর দিকে নিহত জাহিদ হাসান নাটোরের বনপাড়া এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তাঁকে করতোয়া নদীর ধারে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আহমদিয়া জামাতের সালানা।
আরও পড়ুন: