কোটা আন্দোলনের বাংলা ব্লকেডের কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ হোসেন। এ ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মী নিহত আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও বাড়িতে যাচ্ছেন।
আজ বুধবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেলা ২টার দিকে রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে আসেন। কবর জিয়ারত শেষে পাঁচ মিনিট পরিবারের সদস্যের সঙ্গে দেখা করে তিনি চলে যান।
এ সময় কথা হলে আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ভাই দেশের জন্য জীবন দিছে। আমরা চাই না, তার নামের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক ট্যাগ যুক্ত হোক। কেউ যেন না বলতে পারে, ও কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত আছিল। তাকে যেন কেউ রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না করে—এটা আমার অনুরোধ থাকবে। আমার ভাই আবু সাঈদ কোনো রাজনীতি করত না। আমার ভাই একজন সাধারণ ছাত্র আছিল, প্রতিবাদী ছিল—আমরা এভাবেই থাকতে চাই।’
আজ সরেজমিন বাবনপুর জাফরপাড়া গিয়ে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আসার খবর এলাকায় লোকজন উপস্থিত হতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে নেতা–কর্মীদের ভিড় ও অপেক্ষা। এরপর বেলা ২টার দিকে সৈয়দপুর থেকে গাড়িতে পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে আসেন মির্জা ফখরুল।
সেখানে আবু সাঈদের কবর জিয়ারত শেষে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে জাফরপাড়া দাখিল মাদ্রাসা মাঠে সম্প্রতি জনসমাবেশে যোগ দেন। এরপর বেলা ৩টার দিকে রংপুরে রওনা দেন। এদিকে বিকেল ৪টার দিকে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিও আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন এবং পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন।
আবু সাঈদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
গত ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন পার্ক মোড়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন। ১৭ জুলাই বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয় তাঁকে।
আবু সাঈদকে প্রকাশ্যে গুলি করার দৃশ্য দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ হলে সারা দেশে আন্দোলন জোরদার করা হয়। একপর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে যান। এরপর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে ৮ আগস্ট রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টাসহ এ সরকারের সদস্যসংখ্যা ১৭।