পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ে কমলা, স্ট্রবেরি ও চা চাষের সাফল্যের পর নতুন মাত্রায় যুক্ত হয়েছে পুষ্টি ও ওষধি গুন সমৃদ্ধ ড্রাগন ফল চাষ। শুরুটা শখের বসে হলেও সাফল্যের সঙ্গে এখন বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে ড্রাগন ফল বাগান। এসব বাগানে প্রচুর ফল ধরেছে। তরতাজা এই ফলের প্রতিকেজি ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রান্তিক এই জনপদের চাষিদের অব্যাহত প্রচেষ্টা সফল হলে এর সুফল গ্রামীণ এই জনপদে অর্থনীতির মাইলফলক হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, এসব বাগানে প্রচুর ফল ধরেছে। দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতারা এসে বাগান থেকেই ড্রাগন ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। এ সময় কথা হয় অনেক উদ্যোক্তার সঙ্গে।
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার নয়াদীঘির তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা রাশেদ প্রধান শখের বসে তিন বছর আগে অল্প জমিতে ড্রাগন চাষ করে সাফল্য পান। তিনি বাণিজ্যিক আকারে তিন একর জমিতে ড্রাগন বাগান করেন। এই বাগানে তার ৪ হাজার গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে প্রচুর ফল ধরেছে। তিন বছর আগে রোপণকৃত বাগান থেকে গত বছর প্রথম ফল ধরে। প্রথম বছরই তিন লাখ টাকার ফল বিক্রি করেন তিনি। এ বছর এখন পর্যন্ত দুই লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন তিনি। এখনো ১৫ লাখ টাকার বেশি ফল গাছে ধরে আছে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার টুনিরহাট এলাকার ভান্ডারু গ্রামের আব্দুস সামাদ ১০ বিঘা জমিতে ড্রাগনের চাষ করেছেন। লাভজনক হওয়ার কারণে তিনি চা এর বাগান উঠিয়ে এ বছর আরও দুই বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহ আলম মিঞা জানান, বর্তমানে অনেক চাষি গতানুগতিক চাষাবাদ থেকে বের হয়ে আধুনিক ফসল উৎপাদনে এগিয়ে আসছেন। এসব চাষিদের প্রযুক্তিগত সহায়তা সহ সার্বিক বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করছে কৃষি অধিদপ্তর।
তিনি জানান, অধিক পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও প্রচুর ওষধি গুন থাকায় এ ফলের চাহিদা অনেক বেশি। এই ড্রাগন চাষের সাফল্যে জেলার শৌখিন কৃষকেরা এখন পুরোনো গতানুগতিক কৃষি ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল না হয়ে সময়ের প্রয়োজনে এবং চাহিদার কথা বিবেচনা করে লাভজনক কৃষিপণ্য উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। দৃষ্টিনন্দন এই ড্রাগন বাগানগুলি এখন দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি শৌখিন ক্রেতারা প্রতিদিনেই ফল কিনতে বাগানে আসছেন।
পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমান আশা প্রকাশ করে বলেন, পঞ্চগড় জেলার মাটি ড্রাগন চাষের উপযোগী। ফলে পরীক্ষামূলক ভাবে ড্রাগন চাষ করে সাফল্য পাওয়ায় জেলায় বেশ কয়েকটি ছোট-বড় বাগান গড়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে এই জেলায় আরও বাগান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।