কৃষিকাজের পাশাপাশি নিজ বাড়িতে কবুতর পালন করছেন আব্দুল ওয়াহেদ। শখের বসে ৭ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ান জাতের লাল সিরাজি ও কালো সিরাজি দুই জাতের ৮টি কবুতর পালন শুরু করেন তিনি। এখন তাঁর খামারে ছয় জাতের এক শ জোড়া কবুতর। সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে বৃহৎ খামার গড়ে তুলতে চান ওয়াহেদ। খামারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকারত্ব দূরীকরণে ভূমিকা রাখতে চান তিনি।
কবুতরপালনকারী ওয়াহেদের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের কালমেঘ বারঢালী এলাকায়। তিনি ওই এলাকার রহিম উদ্দীনের ছেলে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে কেউ কবুতরের খামার গড়ে তোলেননি। সবচেয়ে বেশি কবুতর পালন হচ্ছে ওয়াহেদের বাড়িতেই।
তবে ওয়াহেদের কবুতর পালনের পেছনের গল্পটা ছিল একবারেই ভিন্ন। ছেলেবেলায় চৌকস পাখি শিকারি হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন ওয়াহেদ। কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে বেশির ভাগ সময় কাটাতেন পাখি শিকারের কাজে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আয়ত্ত করেছিলেন পাখি শিকারের নানা কৌশল। পাখি শিকার করতে যুবক বয়সে বন্দুক কিনেছিলেন।
এরপর পাখি শিকার অপরাধ জানার পর বন্ধ করে করেন সেই কাজ। বিক্রি করে দেন বন্দুক। নতুন করে শুরু করেন কবুতর পালনের কাজ। এখন দিনের বেশির ভাগ সময় কবুতরের সঙ্গেই কাটে তাঁর।
গত সোমবার সকালে ওয়াহেদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, কবুতরদের খাবার খাওয়াচ্ছেন তিনি। চারপাশে ঘিরে রয়েছে কবুতর। কেউ মাথায় চড়ছে, কেউবা হাত থেকে খাবার খাচ্ছে—আর এমন দৃশ্য প্রতিদিন দেখতে ছুটে আসছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
খামার দেখতে আসা কালমেঘ আর আলী কলেজের শিক্ষার্থী সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘কবুতরগুলো সরাসরি হাত থেকে খাবার খাচ্ছে, তাঁর সঙ্গে খেলা করছে। কতটা নিরাপদ এবং নির্ভরশীল মনে করলে মানুষের এত কাছে আসে পাখিরা, ওয়াহেদের খামারে না আসলে বুঝতে পারতাম না। বাড়িতে আমিও কবুতর পালনের চিন্তা করছি।’
ওয়াহেদের প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শখের বসে কবুতর পালন এখন খামারে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন খাওয়ানোর ফলে তাঁর সঙ্গে কবুতরের অন্যরকম সখ্য তৈরি হয়েছে। বাড়ির পাশে এমন দৃশ্য প্রতিদিন আমরা উপভোগ করি।’
ওয়াহেদ জানান, ২০০ কবুতরকে খাওয়ানোর জন্য দৈনিক ৪০-৭০ টাকা খরচ হয় তাঁর। মাসে মাসে ডিম এবং বাচ্চা দেয় কবুতরগুলো। বাজারে এসব কবুতরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জোড়া প্রতি দুই হাজার পর্যন্ত বিক্রি হয়। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ এবং বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবেন তিনি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলার বিভিন্ন বাড়িতে অল্প অল্প করে কবুতর পালন করলেও বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের চিন্তা কেউ করেননি। ওয়াহেদের কথা শুনেছি, তিনি সহযোগিতা চাইলে আমরা তাঁর পাশে থাকব।’