আল মামুন জীবন, বোদা (পঞ্চগড়) থেকে
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। আজ সোমবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পঞ্চগড় জেলা অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় ৫১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
মৃতদের মধ্যে জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ছত্রশিকারপুর গ্রামের একই পরিবারের রয়েছেন চারজন। তারা হলেন, ওই গ্রামের রবিন রায়ের স্ত্রী তারা রায় (২২), ছেলে বিষ্ণু রায় (৩), ছোট ভাই কার্তিক রায়ের স্ত্রী লক্ষ্মী রানী (২৫) ও বড় ভাই বাবুল রায়ের ছেলে দীপঙ্করও (৩)।
গতকাল রোববার মহালয়া উপলক্ষে ধর্মসভায় যোগ দেওয়ার জন্য নৌকায় চড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার জন্য বের হন তাঁরা। এরপর দুপুরের দিকে দুর্ঘটনার শিকার হন।
এদিকে নিহতদের আহাজারিতে গ্রামের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে হারিয়ে রবিন রায় পাগল প্রায়। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘বাচ্চাটা খুব বায়না ধরেছিল নতুন কাপড় নেবে। আমি বলেছিলাম, মহালয়া শেষ হলে তারপর কিনে দেব। আমার বাচ্চার আর নতুন কাপড় পরা হলো না। আমার আজ সব শেষ হয়ে গেল। কী নিয়ে বেঁচে থাকব আমি!’
এ ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া দিপু বলেন, রোববার বিকেলে মহালয়া দেখার জন্য চাচ্ছিলাম। নদীর মাঝখানে যাওয়ার পর হঠাৎ করে নৌকা দুলতে থাকে। তারপর আমি নিচে পড়ে যাই। তারপর সাঁতার কেটে পাড়ে আসি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার নিজ হাতে তিনটি মরদেহ উদ্ধার করেছি। আরও কয়েকজনকে বাঁচিয়েছি। প্রায় ১০০ জনের বেশি লোক আমরা নৌকায় ছিলাম।’
দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম ফরিদ বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ছত্রশিকারপুর এলাকায় একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা প্রশাসক এর পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।’
এদিকে নৌকাডুবির ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের মরদেহ শেষকৃত্য সম্পাদনে পরিবারগুলোকে ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হচ্ছে।