জন্ম থেকে হাত নেই। দুটি পায়ের মধ্যে বাম পা অস্বাভাবিক। নাক, ঠোঁট, তালু কাটা। হাঁটতে গেলেই উঁচু নিচু ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হয়। চলতে গিয়ে খেতে হয় হোঁচট। এরপরও জীবন পথে দমে যায়নি। হাত না থাকলেও পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে কুড়িগ্রামের মানিক রহমান।
সে কুড়িগ্রাম উপজেলার ফুলবাড়ী জসিমিয়া মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। আজ সোমবার প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী মানিক হতে পারে সবার জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। তার এ ফলাফলে ছাত্র, শিক্ষক অভিভাবকসহ সবাই খুশি। এসএসসি পরীক্ষার সময় এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় ‘জোর কদমে চলছে মানিক’ প্রথম পাতায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের ওষুধ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ও প্রভাষক মরিয়ম বেগমের প্রথম সন্তান মানিক রহমান। জন্ম থেকেই সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। অনেক চিকিৎসার পর নাক ও ঠোঁটের আকৃতি কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও অসাধারণ মেধাসম্পন্ন এই কিশোর লেখাপড়াসহ খেলাধুলায় সারা জাগিয়েছে। তাই মা-বাবা আদর করে নাম রাখেন মানিক। দু-পায়ের মধ্যে বাম পায়ে ভর দিয়ে ডান পায়ে দ্রুত লিখে। তার পা দিয়ে লেখা বাংলা ও ইংরেজি অক্ষর এতটাই অসাধারণ যা সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের হস্তাক্ষরকে হার মানায়।
মানিক রহমান বলেন, ‘আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আল্লাহ পাক যেন আমাকে সুস্থ রাখেন। আমি লেখাপড়া শেষ করে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই।’
মানিকের বাবা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার দুই ছেলের মধ্যে মানিক বড়। জন্ম থেকেই তার দুটো হাত না থাকায় আমরা তাকে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করিয়েছি। এ জন্য আমার স্ত্রী মরিয়ম বেগমের অবদান অনেক বেশি। মানিকের এ ফলাফলে তিনি খুব খুশি।’
মানিকের মা মরিয়ম বেগম বলেন, ‘সে আমার কাছে সাত রাজার ধন। আমি আশা করছি, জীবনে সে সফল হবে।’
ফুলবাড়ী জসিমিয়া মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার মানিকের এ ফলাফলে সন্তোষ জানিয়ে বলেন, ‘মানিক রহমান অসম্ভব মেধাবী। দশম শ্রেণিতে ১১৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে তার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলা, কৌতুক ও ভাওয়াইয়া গানে পারদর্শী।’
বিদ্যালয়ের শ্রেণি শিক্ষক মতিন মিয়া বলেন, ‘মানিককে কোনো বিষয়ে দু-বার দেখানোর প্রয়োজন হয়নি। একবার বললে তা অবলীলায় করতে পারে। মানিক নর্থ বেঙ্গল কিন্ডারগার্টেন এন্ড প্রি ক্যাডেট সোসাইটি থেকে ২০১৩ সালের প্রথম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় সাধারণ গ্রেড, অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। মানিক রহমান ভবিষ্যতে দেশ সেরা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়।’