নীলফামারীর ডিমলায় ঘুষ নেওয়ার সময় ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের এক কর্মকর্তাকে আটক করেছে স্থানীয় ছাত্র-জনতা। গতকাল সোমবার বিকেলে উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ভুক্তভোগী সাধারণ জনগণ ওই ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় ঘেরাও করে।
জানা গেছে, ভূমি সহকারী কর্মকর্তা তহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের জেরে এদিন তাঁর কার্যালয়ে যায় স্থানীয় ছাত্র-জনতা। এ সময় ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে তাঁকে হাতেনাতে আটক করে তারা। পরে ওই কর্মকর্তার ভুল স্বীকার এবং ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ওই দিন বিকেলে ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় ঘেরাওয়ের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। এ সময় ওই কর্মকর্তার শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে উত্তেজিত জনতা। পরে ইউএনও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয় লোকজন জানায়, বালাপাড়া ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের কর্মকর্তা তহিদুল ইসলাম টাকা ছাড়া কোনো কাজ করেন না। নামজারি (নাম খারিজ), ডিসিআর ও দাখিলার জন্য তাঁকে আলাদা টাকা দিতে হয়। কখনো টাকা দিলেও মেলে না নামজারি।
খগাখড়িবাড়ি গ্রামের আরিফুল ইসলাম লেলিন বলেন, ‘আমার ৮ শতাংশ জমির নামজারি বাবদ ৬ হাজার টাকা দাবি করেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা। অথচ সরকারি খরচ ১ হাজার ১৭০ টাকা। পরে ৪ হাজার টাকা দিয়েছি। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার সময় ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে আটক করে।’
মজিবুল ইসলাম নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমার ৬ শতাংশ জমির খাজনার রসিদ কেটে নিতে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা তহিদুল ২০ হাজার টাকা চেয়েছেন। পরে ১০ হাজারে রাজি করিয়েছি। পুরো টাকা দিলেও রসিদে লিখেছেন মাত্র ১৩৮ টাকা।’
আদর্শ গ্রামের আনজারুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ২ একর জমির খাজনা বাবদ ৮ হাজার টাকার রসিদ দিয়ে ১৪ হাজার টাকা নিয়েছেন তহিদুল।’
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী আরও অভিযোগ করেন, তহিদুল ইসলাম ঘুষ-বাণিজ্য, অনিয়ম, দুর্নীতি ও তাঁর নিয়োজিত দালাল-কর্মচারী সিন্ডিকেটের উৎপাতে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। গোটা ভূমি কার্যালয় হয়ে উঠেছে অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়া। এ ছাড়া এই ভূমি কর্মকর্তা কাগজ দেখে খাজনা আদায় করেন না। মানুষের সঙ্গে যাচ্ছেতাই আচরণ করেন।
ডিমলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন, ‘লেলিন নামের এক শিক্ষার্থীর কাছে সম্পত্তির নামজারি করার জন্য অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা দাবি করেন ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা। পরে লেলিন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সে অনুযায়ী ভূমি কার্যালয়ের আশপাশে ছাত্র-জনতা অবস্থান নেয়। পরে ঘুষের টাকা নেওয়ার সময় তহিদুল ইসলামকে হাতেনাতে আটক করি। ছাত্র-জনতার চাপের মুখে ঘুষের টাকা ফেরত দিয়ে ভুল স্বীকার করেছেন ওই কর্মকর্তা। তাঁর বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনকে গণস্বাক্ষরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত তহিদুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল দিলেও সাড়া মেলেনি। কার্যালয়ে গিয়েও তাঁর দেখা পাওয়া যায়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা তহিদুল ইসলামকে উদ্ধার করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।