বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা-নিপীড়নের অভিযোগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ৭১ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৯তম সিন্ডিকেট সভা শেষে এসব কথা জানানো হয়।
শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার এবং ছাত্রত্ব শেষ হওয়া ছাত্রলীগের ১৫ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়া জড়িত শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য আগামী সিন্ডিকেট সভায় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শওকাত আলী জানান, তথ্য অনুসন্ধান কমিটি ৭২ জন শিক্ষার্থীর তালিকা দিয়েছিল। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা বোর্ড ২৩ জনকে এক সেমিস্টার ও ৩৩ জনকে দুই সেমিস্টার বহিষ্কার করেছে। ১৫ জন সাবেক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর দুজন শিক্ষক, সাতজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যাপারে ২০১৮ সালের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিন্ডিকেট দায়িত্ব দিয়েছে।
উপাচার্য মো. শওকাত আলী জানান, আবু সাঈদ মারা যাওয়ার পর যারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা-নিপীড়ন করেছে এবং পরোক্ষভাবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের এক সেমিস্টার, দুই সেমিস্টার করে বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রত্ব শেষ হওয়া ছাত্রলীগের ১৫ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী নিপীড়নের দায়ে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে উপাচার্য জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ও হল সংসদ নির্বাচনের আগে আর কোনো নির্বাচন হবে না। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ দেবে।
গত সিন্ডিকেটে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধে শিক্ষার্থীদের তোলা দাবি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে শৃঙ্খলা বোর্ডকে দায়িত্ব দেওয়ার কথাও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড, জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের নিপীড়নে জড়িতদের শনাক্ত এবং শাস্তির ধরন নির্ধারণে কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফেরদৌস রহমানকে সদস্যসচিব এবং অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আমির শরীফকে সদস্য করা হয়। তথ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক, সাতজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ৭২ জন শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয় ওই কমিটি।