রংপুর প্রতিনিধি
চলতি মৌসুমে শুধু রংপুর বিভাগে সরিষার ফলন আশা করা হচ্ছে প্রায় আড়াই লাখ টন। আর সারা দেশে ফলন আশা করা হচ্ছে ১৭ লাখ টনেরও বেশি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বলছে, ফলন বাড়াতে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে গবেষণা চলছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ভোজ্যতেলের চাহিদার ৪০ শতাংশ জোগান দেওয়া সম্ভব হবে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগে চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বারি ৯, ১৪, ১৫, ১৭, ১৮ এবং অধিক ফলনশীল বারি-২০, নতুন হাইব্রিড, বারি হাইব্রিড-১, বারি হাইব্রিড-২ চাষ করছেন কৃষকেরা। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার টন; যা থেকে তেল পাওয়া যাবে ৮৪ হাজার টন। সারা দেশে সরিষা চাষ হয়েছে ১১ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ লাখ ২৫ হাজার টন; যা থেকে তেল পাওয়ার আশা করা হচ্ছে ৬ লাখ ৯০ হাজার টন।
সরকারি হিসাবে, দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২০ লাখ টন। বছরে পাম তেল আমদানি হয় ১৩ লাখ টন, সয়াবিন তেল ৫ লাখ টন। আমদানিতে ব্যয় হয় প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। দেশে সরিষা চাষ বাড়ায় ভোজ্যতেল আমদানি কমবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার জগদীশপুর গ্রামের কৃষক সাদেকুল ইসলাম এবার এক একর জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। উপজেলার ভেড়ভেড়ী মাঠে খেত থেকে সরিষা কাটার সময় সাদিকুল জানান, আগে আমন ওঠার পর বোরো চাষ পর্যন্ত জমি পড়ে থাকত। কিন্তু গত তিন বছর ধরে এই সময়ে তিনি সরিষা চাষ করছেন।
সাদিকুল বলেন, ‘সরিষা হওছে ফাও আবাদ। আমন-বোরো মাঝামাঝি চাষ হয়। সরিষার ফলনও ভালো হয়। খরচ কম, লাভ বেশি।’
ওই মাঠে কথা হয় আরেক চাষি সামছুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এক একরে বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষে খরচ হইছে ১৫ হাজার টাকা। বাড়ির খাবার থুইয়া ১৭ মণ সরিষা ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে বেচাছি। খরচ বাদে লাভ থাকছে ২৭ হাজার টাকা। সেই টাকা দিয়া অ্যালা বোরো নাগাওছু।’
তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের (বারি) প্রকল্প সমন্বয়ক ড. ফেরদৌসী বেগম বলেন, দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদার মাত্র ১২ শতাংশ জোগান আসে নিজস্ব উৎপাদন থেকে। তবে ২০২৫ সালের মধ্যে তা ৪০ শতাংশে পৌঁছাবে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার বলেন, সরিষা ছাড়াও সূর্যমুখী, তিল, সয়াবিন ও বাদাম থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদনেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।