সিলেট অঞ্চলের চা শ্রমিকেরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছেন। সেখানে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি মাত্র ১২০ টাকা। আন্দোলনের মুখে সেটি বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে শ্রমিকেরা এতে রাজি নন। তাঁরা এই দুর্মূল্যের বাজারে অন্তত ৩০০ টাকা করার দাবিতে অনড়।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড় ও দিনাজপুরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি চা বাগান। সেখানে কাজ করেন স্থানীয় ব্যক্তিরাই। শ্রমিক ও মালিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পঞ্চগড় জেলার চা বাগানগুলোতে একজন শ্রমিক দৈনিক ৪৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন।
এখন পাতা সংগ্রহের ভরা মৌসুম চলছে। বাগান থেকে কাঁচা চা পাতা সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী ও পুরুষ শ্রমিকেরা। কাস্তে দিয়ে কেটে পাতা সংগ্রহ করেন অধিকাংশ শ্রমিক। তাঁরা কেজি প্রতি তিন টাকা করে পান। একজন শ্রমিক দৈনিক ১৫০ থেকে ৪০০ কেজি পর্যন্ত পাতা সংগ্রহ করতে পারেন।
সরেজমিনে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি চা পাতার বিনিময়ে পারিশ্রমিক পান তিন টাকা। নারী শ্রমিকেরা প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ কেজি এবং পুরুষ শ্রমিকেরা ৩৫০ কেজি থেকে ৪০০ কেজি পর্যন্ত পাতা সংগ্রহ করতে পারেন। সে হিসেবে একজন নারী শ্রমিক প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা এবং পুরুষ শ্রমিক ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন।
এখন চলছে চা পাতা সংগ্রহের মৌসুম। প্রতিবছর মার্চ মাস থেকে শুরু হয়ে নভেম্বর মাস পর্যন্ত চলে পাতা সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতের কার্যক্রম। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চা পাতা সংগ্রহ বন্ধ থাকে। এ সময় শ্রমিকেরা বাগান পরিচর্যার কাজ করেন।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার জগদল এলাকার চা শ্রমিক খয়রুল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, আগে তিনি কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করে সর্বোচ্চ দৈনিক মজুরি পেতেন ৫০০ টাকা। গত কয়েক বছর ধরে চা বাগান থেকে পাতা তোলার কাজ করছেন। এখানে তিনি প্রতিদিন উপার্জন করছেন ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।
পঞ্চগড় চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড়সহ পার্শ্ববর্তী পাঁচ জেলায় ১০ হাজার ২০০ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এই অঞ্চলে রেকর্ড ৭ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার কেজি সবুজ চা পাতা থেকে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে।
পঞ্চগড় চা বোর্ডের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন জানান, সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের শ্রমিকেরা স্থায়ী। মজুরি ছাড়াও তাঁরা রেশন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। পঞ্চগড়সহ উত্তরের চা বাগানগুলোতে শ্রমিকেরা অস্থায়ীভাবে কাজ করেন। পঞ্চগড় জেলার বাগানগুলোতে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। যার অর্ধেকই নারী শ্রমিক। নারী শ্রমিকেরা সরকারের বিভিন্ন সামাজিক সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন বলেও তিনি জানান।