বহুল প্রত্যাশিত চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশনের আইকনিক ভবন আগামীকাল শনিবার উদ্বোধন হবে। রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন প্রধান অতিথি হিসেবে এটি উদ্বোধন করবেন। নীলফামারীর ডোমার উপজেলার এ স্টেশন ভবনে ঢাকা-শিলিগুড়ি রেলপথে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীদের জন্য চিলাহাটি স্টেশনে ইমিগ্রেশন ও কাষ্টমস কার্যক্রমের ব্যবস্থা থাকছে। এ কারণে উত্তর জনপদের মানুষের মাঝে আনন্দের শেষ নেই।
দেশের উত্তরাঞ্চলের রেলওয়ে স্টেশন চিলাহাটি। সীমান্তবর্তী এ স্টেশনের সঙ্গে ভারতের হলদিবাড়ি রেলপথে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে যাত্রীবাহী ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেস চলাচল করছে। তবে চিলাহাটি স্টেশনে যাত্রী ওঠা-নামার ব্যবস্থা না থাকায় এ ট্রেনের কোনো সুবিধা পাচ্ছে না উত্তরাঞ্চলের মানুষ।
চিলাহাটি স্টেশনে ইমিগ্রেশন না থাকায় শুধুমাত্র ঢাকায় ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস কার্যক্রম সম্পন্ন করে যাতায়াত করতে হয় চিলাহটি হয়ে শিলিগুড়ির এই মিতালী এক্সপ্রেসে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে স্টেশনটির। আগামীকাল শনিবার স্টেশনের উদ্বোধন করবেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তবে স্টেশনটি পুরোপুরি ব্যবহারের জন্য আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রথমে অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে স্টেশনটি। পরবর্তী সময়ে ইমিগ্রেশন চালু করা হবে।
সূত্রটি আরও জানায়, ২০১৯ সালের জুনে শুরু হয় পুরো স্টেশনের আধুনিকায়নের কাজ। পরে করোনা মহামারি ও নকশা জটিলতার কারণে দুই বছর বন্ধ থাকে নির্মাণকাজ।
নকশা সংশোধন করে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক স্টেশনের আদলে চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশনের আইকনিক ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। আধুনিক যাত্রীসুবিধার জন্য টিকিট কাউন্টার, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্রামাগারও থাকবে। থাকছে রেলওয়ের কার্যক্রম চালানোর জন্য বিভিন্ন বিভাগের অফিস। ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় থাকছে ব্যাংক ও রেস্তোরাঁ।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইমিগ্রেশন পয়েন্ট। চিলাহাটি হয়ে ভারতের শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাত্রীরা চলাচল করতে পারবে এই স্টেশন থেকেই। এতদিন মিতালী এক্সপ্রেসে যাতায়তের জন্য ঢাকা থেকে ইমিগ্রেশন হলেও সেই সুবিধা চিলাহাটি থেকেই পাবেন উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা। ফলে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারবেন ভারতের শিলিগুড়িতে।
বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ডোমারের স্থানীয় বাসিন্দা সরকার ফারহানা আক্তার সুমি বলেন, ‘স্টেশন ভবনের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে মহাউৎসব হতে যাচ্ছে আগামীকাল। এটি একটি উত্তরবঙ্গের তথা রংপুর বিভাগের জন্য দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ। মিতালী এক্সপ্রেস আমাদের এখান দিয়ে যাচ্ছে, তবে আমরা উঠতে পারছি না। আইকনিক ভবন চালুর পর আমরা চিলাহাটি থেকে ট্রেনে উঠতে পারব এবং ভারতে যেতে পারব। এতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও ভালো হবে।’
চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার রুহুল আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্টেশন ভবনটি শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে। এর ফলে এখানে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস চালু হবে। এতে করে এ অঞ্চলের যাত্রীরা এই স্টেশন থেকেই খুব সহজে ভারতে যাতায়াত করতে পারবেন। এখন পর্যন্ত ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঠিকাদারি কোম্পানি যেভাবে কাজ করছে আশা করি খুব দ্রুত তারা শতভাগ কাজ সম্পন্ন করতে পারবে।’
প্রসঙ্গত, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর বাংলাদেশের চিলাহাটি আর ভারতের হলদিবাড়ী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
২০২১ সালের ২৭ মার্চ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য মিতালী এক্সপ্রেস উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে করোনাভাইরাস ও ভিসাসংক্রান্ত জটিলতায় আটকে যায় মিতালী এক্সপ্রেসের চলাচল। উদ্বোধনের প্রায় দুই বছর পর ২০২২ সালের জুনে চালু হয় যাত্রীবাহী ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেস।