‘একদল ক্ষমতা আসি সউগ জিনিসের দাম বাড়াইছে, আরেক দল হরতাল-অবরোধ ডাকি হামার কামাই বন্ধ করিছে। অবরোধের জন্যে তিন দিন থাকি শহরোত মানুষ নাই। চাল-ডাল তো দূরের কথা, গ্যারেজ ভাড়ায় হওছে না। দুই দিন থাকি দেনা করি চলুছি। হামার বাঁচা কঠিন হয়্যা গেইছে।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রংপুর মেডিকেল মোড়ে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা রিকশাচালক এরশাদ আলী আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন।
এরশাদ আলী জানান, পাঁচ সদস্যের সংসারে রিকশা চালিয়ে অন্ন জোগান। ভাঙাচোরা ঘর মেরামতে সাপ্তাহিক কিস্তিতে এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন মাস তিনেক আগে। শহরে যে রিকশাটি তিনি চালান সেটি ভাড়ার। প্রতিদিন রিকশার জমা বাবদ মালিককে দিতে হয় ৩৫০ টাকা।
স্বাভাবিক দিনে ৭০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত আয় হলেও অবরোধের কারণে ৩০০ টাকা আয় করাই হিমশিম হয়ে গেছে। তিন দিন ধরে তিনি রিকশার জমার টাকাই তুলতে আয় করতে পারেননি।
বিভাগীয় শহর রংপুরে প্রতিদিন পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী থেকে হাজারো মানুষ নানা প্রয়োজনে মেডিকেল মোড় হয়ে রংপুর শহরে আসেন। কিন্তু ৩১ অক্টোবর থেকে ২ সেপ্টেম্বর বিএনপির তিন দিনের ডাকা অবরোধ কর্মসূচিতে শহরে স্বাভাবিক সময়ের মতো লোক সমাগম নেই।
ফলে আয় কমেছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের চালকের। অবরোধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবনযাত্রায়।
সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রংপুর মেডিকেল মোড়, বাস টার্মিনাল, মডার্ন মোড় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রী ওঠানামায় ব্যস্ত থাকা রিকশা-ইজিবাইকের চালকেরা যাত্রীর অপেক্ষায় বসে আছে। দুই-একটি যাত্রী নিয়ে ইজিবাইকগুলো ছুটে চলেছে। শহরে তেমন লোক সমাগম নেই।
মডার্ন মোড়ে যাত্রীর অপেক্ষায় শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দ্যাশে এখন যা কিছু হওছে সউগ হামার মতন গরিবোক মারি ফেলার তকনে। একসের চাল ৬০ টাকা, একসের সবজি ৭০ টাকা। কী খায়া বাঁচমো কন। তার ওপর গাড়ি চলেয়া যে দুই টাকা কামাই করমো তারও উপায় নাই। হরতাল অবরোধে ভয়ে মানুষ বাড়ি বাইরোত বেরাওছে না। গতকাইল সকাল থাকি রাইত পর্যন্ত ৫০০ টাকা কামাই হইছে। গ্যারেজোত দিছু ৩৫০, দেড় শ নিয়া বাড়িত গেছুন। আইজ যে কী হইবে তাক আল্লায় জানে।’
তিন বছরের শিশুকে চিকিৎসার জন্য দিনাজপুরের খানসামা থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছেন স্কুলশিক্ষক আশরাফুল ইসলাম। বাস বন্ধ থাকায় যাত্রাপথে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
আশরাফুল আলম বলেন, ‘রাস্তায় গাড়ি নাই, রিকশা-অটোতে করে হাসপাতালে আসতে হলো। অবরোধ দিয়া লাভ কী যদি সাধারণ মানুষের উপকারেই না আসে। এমন অবরোধের জন্য জীবন-জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।’
এদিকে বিএনপির তিন দিনের ডাকা অবরোধ কর্মসূচিতে দলটির নেতা-কর্মীদের তেমন সক্রিয় দেখা না গেলেও; ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনগুলোকে শান্তি সমাবেশ করতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে রংপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) ফেরদৌস আলী চৌধুরী বলেন, এখন পর্যন্ত রংপুরের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে।