আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন না মেনে একদম শূন্যরেখার শেষ অংশে দেওয়া কাঁটাতারের বেড়ায় কাচের বোতল ঝুলিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বেড়া দেওয়ার ছয় দিনের মাথায় আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে বেড়ার চার থেকে পাঁচ গজ পরপর একটি খালি কাচের বোতল (মদ ও সফট ড্রিংকসের) বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে সীমান্ত এলাকার মানুষদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
এর আগে, গত ১০ জানুয়ারি সকাল থেকে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়নের সরকারপাড়া সীমান্তে বাংলাদেশ-ভারতের প্রধান পিলার ডিএমপি ৮ নম্বরের সাব-পিলার ৩৭ থেকে ৪৬ নম্বরের শূন্যরেখার শেষে অংশে প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে বিএসএফ ভারতীয় নির্মাণশ্রমিকদের নিয়ে লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে তৈরি খুঁটির মধ্যে সাড়ে ৩ থেকে ৪ ফুট উঁচু কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করে।
বিজিবি সূত্র ও স্থানীয়রা জানায়, বুধবার দুপুর ১২টায় ভারতের কোচবিহার রাজ্যের ৬ রানীনগর বিএসএফ ব্যাটালিয়নের করুণ ক্যাম্পের বিএসএফের ১০ থেকে ১২ জন সদস্য শূন্যরেখায় নির্মিত কাঁটাতারের বেড়ার কাছে আসেন। এ সময় তাঁরা ডিএমপি ৮ নম্বরের সাব-পিলার ৩৮ থেকে ৪৬ নম্বরের শূন্যরেখায় নির্মিত বেড়ার প্রায় এক কিলোমিটার অংশের তারগুলোতে ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি মাপের কাচের খালি বোতল জিআই তার দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে দিতে থাকেন। স্থানীয়রা দেখে বিজিবিকে খবর দেয়। দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ক্যাম্পের টহল দলের বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে বোতল ঝোলাতে নিষেধ করলে বিএসএফ তা শোনেনি। বিএসএফের সহায়তায় লোহার অ্যাঙ্গেলের ওপর ৪ ফুট উচ্চতার এ বেড়া নির্মাণ করেন ভারতীয় নির্মাণশ্রমিকেরা। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো সীমান্ত এলাকায়। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মাঝে উত্তেজনাও দেখা দেয়। একপর্যায়ে তারা কাজ শেষ করে চলে যায়।
দফায় দফায় পতাকা বৈঠকের আহ্বান করেও বিএসএফের সাড়া মেলেনি। ফলে সমস্যাটি অমীমাংসিত থেকে যায়। বেড়াটি নির্মাণের পর থেকে কাঁটাতারের বেড়ার স্থানে ভারী অস্ত্র নিয়ে টহল জোরদার করা হয়। সন্ধ্যার পর থেকে উচ্চমানসম্পন্ন লাইট ব্যবহার করে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে বিএসএফ। এতে সীমান্তবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। এমনিতেই আমরা আতঙ্কে আছি। এর মধ্যে হঠাৎ কাঁটাতরের বেড়ায় মদের খালি বোতল ঝুলিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে আমরা নতুন করে আতঙ্কে পড়েছি।’
দহগ্রামের সরকারপাড়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা গৃহিণী রহিমা বেগম (৪০) বলেন, ‘বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের পর সন্ধ্যা থেকে সারা রাত অনেক বেশি আলোর টর্চলাইট জ্বালায়, শোরগোল করে। সন্তান ও পরিবার নিয়ে ভয়ে আছি। আজ আবার কাচের বোতল টানিয়েছে। কখন কী হয়।’
একই এলাকার কৃষক জমসের আলী (৫৫) বলেন, ‘সীমান্তে কৃষিজমি। খেতে কাজ করতে গেলেও ভয় পাই। বিএসএফ দূর থেকে গালাগালি করে। চলে যেতে বলে। বেড়া দেওয়ার ছয় দিনের মাথায় মদের বোতলগুলো কাঁটাতারগুলোতে ঝুলিয়ে দিল। এর কী রহস্য বুঝতেছি না।’
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) রংপুর-৫১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সেলিম আলদীন বলেন, ‘শূন্যরেখায় বেড়া দিয়ে তারা (বিএসএফ) নিজেরাই টেনশনে আছে। বেড়ার প্রোটেকশনের জন্যই তারা কাচের বোতল ঝুলিয়েছে। যদি কেউ রাতের আঁধারে বেড়া তুলে নিয়ে যায়, সে জন্য তারা এই প্রটেকশন ব্যবহার করেছে।’