চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে চেয়ারম্যান কার্যালয়ে এক লাখ টাকায় দুই পক্ষের সালিস শেষে বাড়ি ফিরে আত্মহত্যা করেছেন এক গৃহবধূ। গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে সোমবার (২১ আগস্ট) সকালে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের কালিতলা গ্রামের মহির মেম্বার পাড়ায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আত্মহত্যা করেছেন গৃহবধূ লাভলী বেগম (৩১)। তাঁর স্বামী জামিনুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় থাকেন। তাঁদের দুই সন্তান। জীবিকার তাগিদে স্বামী দীর্ঘ সময় বাইরে থাকার সুযোগে লাভলী বেগমের সঙ্গে একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সিঙ্গানগর গ্রামে বাবার বাড়ি এলাকার নিরঞ্জন রায়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রোববার (২০ আগস্ট) রাতে নিরঞ্জন রায় লাভলীর বাসা আসেন দেখা করতে। টের পেয়ে স্থানীয়রা তাঁদের ধরে ফেলে।
স্থানীয়রা বলছে বলেন, গ্রাম পুলিশ কার্তিক চন্দ্র রায়ের সহযোগিতায় ৯ ও ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খিতিষ চন্দ্র রায় ও আব্দুল সামাদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিরঞ্জন রায়ের পরিবারের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা আদায় করেন। পরে দুজনকে নশরতপুর ইউপি চেয়ারম্যান কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়।
ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিলে চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব ছেলের পরিবারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১ লাখ টাকা আদায় করে দুজনকে নিজ নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।
পরে রাত আনুমানিক ২টার দিকে বাড়িতে ফিরে লাভলী বেগম গ্যাস ট্যাবলেট (কীটনাশক) খান। পরিবারের লোকজন টের পেয়ে তাঁকে চিরিরবন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (২১) সকালে লাভলী বেগমের মৃত্যু হয়।
পরিবারের লোকজন বলছেন, চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে সালিস এবং সবার জানাজানি হওয়ার কারণে লজ্জায় লাভলী বেগম আত্মহত্যা করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নশরতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব বলেন, ‘আমি সালিসের মাধ্যমে দুপক্ষকে বসিয়ে ছেলে পক্ষের কাছ থেকে মেয়ে পক্ষকে ১ লাখ টাকা আদায় করে দিয়েছি।’ তবে মেম্বার ও গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে যে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সে সম্পর্কে কিছু জানেন না তিনি।
চিরিরবন্দর থানার ওসি বজলুর রশিদ আত্মহত্যার তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। লাশ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তীতে কোনো অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’