দিনাজপুরের ফুলবাড়ী স্টেশনের একটি লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি রেলকোচ। সেই কোচের দেয়াল জুড়ে রং তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ভাষা আন্দোলন, ছয় দফাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের ইতিহাস। কোচটির নাম রাখা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর।’
আজ মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, জাদুঘরটি দেখতে ভিড় করছে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন বয়সী, শ্রেণি-পেশার মানুষ। জাদুঘরটির প্রতি সকলের কৌতূহল ভেতরে কী রয়েছে! সেই সঙ্গে বাইরে সেখানে কেউ সেলফি তুলছেন, কেউবা কোচটির ভেতরে ঢুকে ঘুরে দেখছেন।
কোচের ভেতরে প্রবেশ করতেই কানে ভেসে আসে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। দরজার পাশে মুজিব শতবর্ষের লোগো। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে ভিডিও চিত্র। জাদুঘরটিতে রাখা হয়েছে জাতির পিতার টুঙ্গিপাড়ার বাড়ির আলোকচিত্র, জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ছবি। আছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত চশমা, দলীয় প্রতীক নৌকা, মুজিব কোট, তামাকের পাইপ, বঙ্গবন্ধুর লেখা বই, পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের আলোকচিত্র, মুজিবনগর স্মৃতিস্তম্ভ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও বঙ্গবন্ধু সমাধি সৌধের রেপ্লিকা।
জাদুঘরটি দেখতে আসা শিক্ষার্থী অনামিকা সরকার বলেন, ‘লোক মুখে শুনে এই জাদুঘরটি দেখতে এসেছি, আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিনে এমন একটা চমক দেখতে পেলাম। খুব ভালো লাগছে।’
মোস্তাকিম হোসেন নামের একজন ট্রেনের যাত্রী বলেন, ‘স্টেশনে এসে দেখি ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর। পুরোটা ঘুরে দেখলাম। এটি খুবই ভালো উদ্যোগ এখান থেকে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, ছয় দফাসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন সম্পর্কেও জানতে পারবে।’
ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর আংশিক জীবনী তুলে ধরতে রেলপথ মন্ত্রণালয় এই জাদুঘরটি নির্মাণ করেছেন। স্থিরচিত্র, রেপ্লিকা ও ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে পুরো জাদুঘর। জাদুঘরটিতে ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ১২টি গ্যালারির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
এ বিষয়ে ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার খাইরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সোমবার রাতে কোচটি পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশন থেকে ফুলবাড়ী এসে পৌঁছায়। বর্তমানে এটি স্টেশনের ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের পূর্ব দিকে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় জাদুঘরটি। আগামী বুধবার পর্যন্ত এটি ফুলবাড়ী রেলস্টেশনে থাকবে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত এবং বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত জাদুঘরটি সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।’
খাইরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা বয়সের দর্শনার্থীরা আসছেন এখানে। বিনা মূল্যে সবাই ঘুরে দেখছেন এটি। ১৭ জানুয়ারি পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের কার্যালয় থেকে ভ্রাম্যমাণ এই রেল জাদুঘরটি যাত্রা শুরু করে, শিডিউল অনুযায়ী প্রতিটি স্টেশনে দাঁড়ায় দর্শনার্থীদের প্রদর্শনের জন্য। বুধবার রাতে বিরামপুর অভিমুখে রওনা দেবে।’